শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

SW News24
বুধবার ● ১৬ অক্টোবর ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » বিপন্ন সপ্তপর্ণী ছাতিম গাছ
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » বিপন্ন সপ্তপর্ণী ছাতিম গাছ
৩২ বার পঠিত
বুধবার ● ১৬ অক্টোবর ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বিপন্ন সপ্তপর্ণী ছাতিম গাছ

 ---    চিরসবুজ উদ্ভিদ ছাতিম বৃক্ষ প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে বেশ পরিচিত। হেমন্তের স্নিগ্ধ প্রকৃতিতে সন্ধ্যা নামতেই বাতাসে ছাতিম ফুলের ম ম গন্ধ। প্রকৃতিতে বয়ে বেড়ানো হালকা বাতাসের সাথে থেকে ভেসে আসে বুনো ফুল ছাতিমের মিষ্টি ঘ্রাণ। সূর্য যখন বেলা শেষে গোধূলিতে যায়, তখন থেকেই একটু একটু করে ছড়াতে থাকে মায়াবী এ ঘ্রাণ। ঝাঁকড়া পত্রপল্লব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু ছাতিম গাছের শাখা-প্রশাখায় ভরা সবুজ পাতা আর সাদা ফুলে সবুজাভ রঙে থোকায় থোকায় অগুনতি ফুলে প্রকৃতির কী নিঃসর্গ তা না দেখলে অনুভব করা যায় না।

ছাতিমের পাতা বেশ দৃষ্টিনন্দন, ডালের আগায় একসঙ্গে ছয়-সাতটি পাতা মিলে অপূর্ব সুন্দর বিন্যাসে নিজেকে প্রকাশ করে। তাই ছাতিমের আরেক নাম সপ্তপর্ণ। পাতাগুলো গাছজুড়ে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ছাতার মতো থরে থরে সাজানো। পাতার সুনিবিড় ছায়ায় সুউচ্চ ছাতিম তীব্রভাবে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করে।

ছাতিম ফুলের বিপুল ঐশ্বর্যে, প্রকৃতির কি এক অদ্ভুত খেলা। রাতে যে ফুলের এত গন্ধ, সকালেই তা কি করে কর্পূরের মতো উবে যায়। আবার নিশি শেষে বাসি ফুল থেকে ভেসে আসে তীব্র ঝাঁজালো গন্ধ, সে গন্ধে মাথাটা ঝিমঝিম করে। ছাতিমগাছের বীজের বাতাসে ভেসে চলার অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে। ছোট কাঠির মতো বীজের সঙ্গে প্রান্তে থাকে পশমের মতো অঙ্গ। ফল ফেটে বীজ বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে তা বাতাসে ভেসে ভেসে অনেক দূরে চলে যায়। সুবিধামতো জায়গায় পড়লে সেখানেই ছাতিমগাছ গজিয়ে ওঠে।

সারাবিশ্বে এর প্রায় ৪০-৬০টি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। ছাতিম গাছে আদি বাসস্থান পূর্ব এশিয়ার চীন, ভারত, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং অস্ট্রেলিয়া। এমনকি এটি আফ্রিকায়ও দেখা যায়। ছাতিম গাছ প্রায় ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বহুশাখা বিশিষ্ট গাছটির ছাল গন্ধহীন, অসমতল ও ধূসর। ছাতিম পাতার উপরের দিক চকচকে আর তলার দিক ধূসর থাকে। ছাতিম গাছের পত্রটি যৌগিক পত্র। এর বৃন্তের গোড়ায় সাধারণত সাতটি পত্রক থাকায় সংস্কৃত ভাষায় একে সপ্তপর্ণ বা সপ্তপর্ণী উদ্ভিদ বলে। বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে এটিকে ছাতিয়ান, ছাইত্তান, ছাইত্তান্না বা ছাতিম নামে ডাকা হয়।   ---

গাছটির তেমন বাণিজ্যিক মূল্য নেই। এ গাছের ফুল ও ফল বন্যপ্রাণী বিশেষ করে বানর-হনুমানরা খায়। কাঠেরও তেমন বাণিজ্যিক মূল্য নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে ছাতিম গাছের কাঠকে বলা হয় হোয়াইট চিজ উড বা শ্বেত নমনীয় কাঠ। জ্বালানি, হালকা আসবাবপত্র, লেখাপড়ার ব্ল্যাকবোর্ড, দিয়াশলাইয়ের বাক্স প্রভৃতি তৈরিতে ছাতিম গাছের কাঠ ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশে এক সময় গ্রামের রাস্তার পাশে, বনে-জঙ্গলে এ গাছ থাকলেও বর্তমানে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না ছাতিম গাছ। দূর থেকে ভেসে আসা সুঘ্রাণ শুঁকে গাছটিকে খুঁজে নিতে হয়। নির্বিচারে গাছ কেটে বিক্রি করা বা বসতবাড়ি নির্মাণের ফলে অন্যান্য গাছের সাথে উজাড় হতে হতে এখন এ ছাতিম গাছের দেখা মেলে না বললেই চলে। নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে ছাতিম গাছ এখন বিপন্ন প্রজাতির। খুলনা জেলার পাইকগাছার গদাইপুর মেইন সড়কের পাশে ছাতিম গাছের দেখা মিলেছে।

আমাদের দেশে গাছ অযত্ন অবহেলায় বড় হলেও পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য উদ্ভিদ হিসাবে সম্মান দেওয়া হয়েছে ছাতিম গাছকে। বাংলা সাহিত্য ও কবিতায় গুরুত্বসহকারে ছাতিম গাছের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে গাছটিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

ছাতিম গাছের কষ বা আঠা অনেকে ঘা বা ক্ষতে লাগিয়ে থাকেন। এর বাকল বা ছাল ওষুধের কাজে ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়ে এটি অত্যন্ত উপকারী। জ্বর ধীরে ধীরে নামায় বলে ম্যালেরিয়াতেও উপকারী। চর্মরোগেও ছাতিম ফলপ্রদ।

বাণিজ্যিক মূল্য নেই বলে ছাতিমকে কেউ তাদের বাগানে বাড়ির পাশে কিংবা রাস্তার ধারে লাগায় না। অযত্নে অবহেলায় ছাতিম গাছ বেড়ে ওঠে। জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় বিলুপ্তপ্রায় ছাতিম গাছ রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি।





আর্কাইভ