শিরোনাম:
পাইকগাছা, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১

SW News24
শনিবার ● ২ নভেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » মহাজনদের চড়াসুদের বোঝা মাথায় নিয়ে জীবিকার লক্ষে জেলেদের সমুদ্রযাত্রা
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » মহাজনদের চড়াসুদের বোঝা মাথায় নিয়ে জীবিকার লক্ষে জেলেদের সমুদ্রযাত্রা
৩৯ বার পঠিত
শনিবার ● ২ নভেম্বর ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

মহাজনদের চড়াসুদের বোঝা মাথায় নিয়ে জীবিকার লক্ষে জেলেদের সমুদ্রযাত্রা

 --- জীবনের ঝুঁকি ও ঋণের বোঝা নিয়ে মৎস্য আহরণে সমুদ্রে যাত্রা করছে উপকুলের জেলারা। নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুঁটকি মৌসুম। সমুদ্রগামী শুটকী পল্লী জেলেরা জীবনের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে মৎস্য আহরণ করলেও নানা প্রতিকূলতায় ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারেনি। ক্রমবর্ধমান ক্ষতির মুখে পড়ে পুজি, জাল ও নৌকা হারিয়ে অনেকেই পেশা বদলেছেন। আবার অনেকে চড়া হারে মহাজনদের কাছ থেকে টাকা সুধে নিয়ে এ পেশায় টিকে থাকার জন্য কঠোর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।

জেলেরা সমুদ্রে মৎস্য আহরণকে ঘিরে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে। ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় জীবনের ঝুকি নিয়ে চলেছে উপকূলের জেলেরা। সাগরে যেতে যে যার মত প্রস্তুত করছেন জাল, দড়ি, নৌকা-ট্রলার। কেউ কেউ গড়ছেন নতুন ট্রলার, আবার কেউ পুরাতন নৌকা মেরামত করে নিয়েছেন। প্রস্তুতি অনুযায়ী অনেকেই আগেভাগে রওনা দিয়েছেন।

জানা গেছে, বৃটিশ আমল থেকে শুটকী পল্লীর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে মগ বা সন্দীপ ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় জেলেরা সুন্দরবনের চরে অস্থায়ী বাসা তৈরী করে মৎস্য আহরণ করত। আশির দশক থেকে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা ও পটুয়াখালীর জেলেরা সুন্দরবন এলাকায় শুটকীর জন্য বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায় মৎস্য আহরণ শুরু করেন। নানান প্রতিকূলতার মধ্য থেকে জেলেরা মৎস্য আহরণ করে আসছে। জেলেরা ডাঙ্গায় বাঘ, জলে কুমির-হাঙ্গর, বনদস্যু-জলদস্যুর উৎপাত ও বনরক্ষীদের হয়রানীর মধ্যেও তাদের পেশা টিকিয়ে রেখেছে।

---দুবলার চর বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি দ্বীপ যা চর নামে হিন্দুধর্মের পূণ্যস্নান, রাসমেলা এবং হরিণের জন্য বহুল পরিচিত। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে এটি একটি বিচ্ছিন্ন চর। এই চরের মোট আয়তন প্রায় ৮১ বর্গমাইল। দুবলার চরে তৈরি হয় জেলে গ্রাম। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শোকানোর কাজ। বর্ষা মৌসুমের ইলিশ শিকারের পর বহু জেলে চার মাসের জন্য সুদূর কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা থেকে ডেরা বেঁধে সাময়িক বসতি গড়ে সেখানে। মেহেরআলীর খাল, আলোরকোল, মাঝেরচর, অফিসকেল্লা, নারিকেলবাড়িয়া, মানিকখালী, ছাফরাখালী ও শ্যালারচর ইত্যাদি এলাকায় জেলে পল্লী স্থাপিত হয়। এই চার মাস তারা মাছকে শুঁটকি বানাতে ব্যস্ত থাকেন। এখান থেকে শুঁটকি চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের পাইকারী বাজারে মজুদ ও বিক্রয় করা হয়।

সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগ থেকে মাছ সংগ্রহের অনুমতি সাপেক্ষে বহরদার ও জেলেরা দুবলার চরে প্রবেশ করে থাকেন। দুবলার চর থেকে সরকার নিয়মিত হারে রাজস্ব পেয়ে থাকে। প্রতি বছর বিএলসি বা বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট, ডিএফসি বা ডেইলি ফুয়েল (জ্বালানি কাঠ) ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় বন বিভাগকে রাজস্ব প্রদান করে মৎস্য ব্যবসায়ীগণ সুন্দরবনে ঢোকার অনুমতি পান। এছাড়া আহরিত শুঁটকি মাছ পরিমাপ করে নিয়ে ফিরে আসার সময় মাছ প্রকার ভেদে প্রদান করেন নির্ধারিত রাজস্ব।

খুলনা জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে পলি জমে ভরাট হওয়ায় শুধুমাত্র সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে ও নানা প্রতিকূলতায় ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারেনি জেলে পরিবারগুলো। তফশীলি ব্যাংক থেকে জেলেদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করার কথা থাকলেও বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেওয়ায় তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হয়।

বোয়ালিয়া জেলে পল্লীর বাসিন্দা শিতেনাথ বিশ্বাস বলেন, প্রতি বছর আমরা মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ করে সমুদ্রে যাই। সরকারিভাবে আমরা তেমন কোন সাহায্য সহযোগীতা পাইনা। সুন্দরবনে জলদস্যু-বনদস্যুর উৎপাত ও মুক্তিপণ আদায়সহ আসাধু বনরক্ষীদের দৌরাত্ম্য কিছুটা বন্ধ হলেও এখনও সীমাহীন সমস্যায় মধ্যে থাকতে হয় আমাদের।

বোয়ালিয়ার জেলে দিপঙ্কর বিশ্বাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা প্রতিবছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র থেকে মাছ ধরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব সরকারকে দেই। কিন্তু আমরা সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য কোন ঋণ পাই না। জেলেদের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণসহ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।
এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের ডিএফও ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, ম্যানগ্রোভ এ বনকে আমাদের বনবিভাগের চৌকস বাহিনী দিয়ে নজরদারীর আওতায় আনা হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে গোটা সুন্দরবনে আধুনিক স্মার্ট প্যাট্রোলিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলে, বাওয়ালী, মৌয়ালসহ অন্যান্য পেশাজীবীরা যাতে নির্বিঘ্নে বনজ সম্পদ আহরণ করতে পারে সেজন্য বনবিভাগের পক্ষ থেকে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।





আর্কাইভ