শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
বৃহস্পতিবার ● ২৮ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » পরিবেশ » “২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস” বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমলেও বিশ্বে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে
প্রথম পাতা » পরিবেশ » “২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস” বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমলেও বিশ্বে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে
২২৮১ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ২৮ জুলাই ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

“২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস” বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমলেও বিশ্বে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান

বিশ্বে সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ বাঘের আবাসস্থল বাংলদেশের সুন্দরবনের অংশ। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বদলে যাওয়ায় বাঘের জীবন চক্র বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বনের বাঘের জীবন সংকটাপন্ন। বাঘের জীবন চক্রের জন্য সুন্দরবনে যে স্বাদুপানি, নিরুপদ্রব, নিরাপদ প্রজনন ব্যবস্থা থাকা দরকার বর্তমান তার কোনটাই যথেষ্ট নয়।

২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস। বাঘ সুরক্ষায় বিশ্বের নানা দেশ বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে।  বিশ্বে ১৩টি দেশে এখনও বাঘ টিকে আছে। ১শত বছর আগে পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা ছিল ১ লাখ। গত এক শতাব্দীর মধ্যে প্রথম বারের মত বিশ্বে বাঘের সংখ্যা বদ্ধি পেয়েছে বলে প্রাণি সংরক্ষণবিদরা জানিয়েছেন। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড ও গ্লোবাল টাইগার ফোরাম জানিয়েছে, সর্বশেষ বিশ্ব শুমারিতে ৩ হাজার ৮৯০টি বাঘের সন্ধান পাওয়া গেছে। সর্বশেষ গণরায় দেখা গেছে, বিশ্বে মোট বাঘের অর্ধেকের ও বেশী ভারতে রয়েছে, যার সংখ্যা ২ হাজার ২শ ২৬টি। ২০১০ সালে বিশ্বব্যাপী বাঘের সংখ্যা ৩ হাজার ২শ টিতে নেমে গিয়েছিল। এক সময় বিশ্বে ৮ প্রজাতির বাঘের পদচারনা ছিল সর্বত্র। প্রজাতিগুলো হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সাইবেরিয়ান বাঘ, ইন্দো চাইনিজ বাঘ, কাশিয়ান বাঘ, জাভান বাঘ, সুমাত্রান বাঘ, দক্ষিন চীনা বাঘ ও বালি বাঘ। এর মধ্যে বালি বাঘ, জাভান বাঘ ও দক্ষিন চীনা বাঘ বিলুপ্তির পথে।

বাঘ গননা জরিপ ২০১৫ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা সর্বসাকুল্যে ১০৬টি। সুন্দরবন ভারতের অংশে ৬৪টি। বাংলাদেশ ও ভারত মিলে পুরা সুন্দরবন মিলে বাঘের সংখ্যা ১৭০টি। বন বিভাগের জরিপ দল সুন্দরবনে মোট ৩৮টি পূর্ণবয়স্ক ও ৪টি বাঘের বাচ্চার ছবি তুলতে পেরেছে। বাকী ৬৮টি বাঘের সংখ্যা নির্ধারন করা হয়েছে খালে তাদের পায়ের ছাপ গুনে ও বিচরণের অন্যান্য তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে ক্যামেরা বন্দি হওয়া ৩৮টি বাঘের ৩০ শতাংশ পুরুষ এবং বাকীগুলো নারী। বন্য প্রানী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষনের খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকায় ‘পায়ের ছাপ হিসাব করে বাঘ গণনা পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য মনে করা হয় না। পরবর্তীতে ভারত ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ গননা শুরু করে। পরে বিভিন্ন দেশ এ পদ্ধতি চালু করে। বাংলাদেশের সুন্দরবন এ পদ্ধতিতে গননা কর হয়। তবে বাংলাদেশে বাঘ হত্যার বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া যায় না বলে মনে করেন এ বন কর্মকর্তা।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, সুন্দরবনে বড় ৬টি শিকারী দল বাঘ হত্যায় তৎপর আছে। তারা সুযোগ পেলে বাঘ হত্যা করে অঙ্গ, প্রত্যঙ্গ বিভিন্ন দেশে পাচার করে। পশ্চিম বন বিভাগে শিকারীরা বেশী তৎপর। এ পর্যন্ত শিকারীদের হাতে কত কি বাঘ মারা পড়েছে তার হিসাব বন বিভাগের কাছে নেই। তবে বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী ১৯৮০ সাল থেকে এ পর্যন্ত চোরা শিকারী ও বন দস্যুদের হামলা, গ্রামবাসীর গনপিটুনি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে সুন্দরবনের ৭০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। তবে পরিমান বাঘ হত্যার ঘটনা ঘটেছে তার তুলনায় কমই হিসাবে ধরা পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করে তিন পরিস্থিতিতে বাঘ লোকলয়ে এসে হত্যার শিকার হয়। প্রথমত, বাঘ যে এলাকায় থাকে সে এলাকায় খাদ্যের অভাব। দ্বিতীয়ত, বাচ্চা বাঘ ২ থেকে আড়াই বছর বয়সে মাকে ছেড়ে আলাদা হয়ে যায়। এ সময় বাঘ তার নিজস্ব এলাকা নির্ধারনের জন্য এলাকা খুঁজতে খুজতে বনের বাইরে আসতে পারে। তৃতীয়ত, বৃদ্ধ হয়ে গেলে বা অসুস্থ হরে বাঘ তার নিজ এলাকা হারিয়ে ফেলে। আরেকটি বাঘ তার এলাকা দখল করে নেয়। তখন এই বাঘ খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসে। পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগে বাঘ লোকালয়ে আসার ঘটনা বেশী ঘটে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহির উদ্দীন আহম্মদ জানান, সুন্দরবনে সম্পদের উপর মানুষের চাপও এখন অনেক বেশি। এটি বনের সম্পদ ও প্রানীর জন্য হুমকি। বন বিভাগের জনবল খুব কম। বনের সম্পদ রক্ষায় বনকর্মী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সব সময় তৎপর রয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষন সংঘ (আইইউডিএন) ২০১০ সালে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসাবে ঘোষনা করে। বাঘ এখন বিশ্বের প্রায় বিলুপ্ত প্রানী। কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সুন্দরবন থেকে বাঘ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বন বিভাগ সূত্রে জানাযায়, ১৯৮২ সালে সুন্দরবনে বাংলাদেশের অংশে বাঘ ছিল ৪৫৩টি। ২০০৪ সালে ৪৪০টি, পরে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়েছে বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা ৩৬৯টি। সর্বশেষ ২০১৫ সালের গণনায় ১০৬টি।

বাঘের বসবাস আছে বিশ্বে এমন ১৩টি দেশের বন ও পরিবেশ মন্ত্রীরা দিল্লীতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বের বাঘের সংখ্যা দ্বিগুন করার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে বিবিসি’র এক প্রতিবেদনায় জানানো হয়েছে। বাঘ সুন্দরবনের প্রাকৃতিক রক্ষক। বাঘ কমলে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্যের উপর হুমকি বাড়বে। তাই শুধু বাঘ নয়, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে রক্ষায় এবং সকল জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। পাশাপাশি সুন্দরবন সংলগ্ন জনপদের জনগনকে বন সুরক্ষায় আরো বেশী সচেতন এবং উদ্ভুদ্ধ করতে হবে। আর তা না হলে বিপন্ন হবে বাংলাদেশের গৌরব বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন।





আর্কাইভ