শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
রবিবার ● ১৭ নভেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » মুক্তমত » টেলিভিশন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম
প্রথম পাতা » মুক্তমত » টেলিভিশন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম
৪৪ বার পঠিত
রবিবার ● ১৭ নভেম্বর ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

টেলিভিশন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম

 ---

প্রকাশ ঘোষ বিধান:

টেলিভিশন একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। বর্তমান বিশ্বে টেলিভিশন আমাদের জীবন ধারায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছে। যার প্রভাব ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই গণমাধ্যম নিয়ে কৌতূহলের যেমন শেষ নেই, তেমন সাধারণ মানুষের মধ্যে সংবাদ ও বিনোদনে আস্থা রেখেছে টেলিভিশন। টেলিভিশন প্রতিটি বাড়ির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি সব বয়সীদের জন্য বিনোদনের সমন্বয় বস্তু। শিশুদের কার্টুন থেকে শুরু করে বয়স্কদের জন্য সংবাদ বা সিনেমা সব মিলিয়ে টেলিভিশন একটি পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু। টেলিভিশন যুগ যুগ ধরে একইরকম ভাবে গুরুত্বপূর্ণ সবার কাছে।

২১ নভেম্বর  বিশ্ব টেলিভিশন দিবস। ১৯২৬ সালের এই দিনে টেলিভিশন উদ্ভাবন করেন জন লোগি বেয়ার্ড। তাঁর এই উদ্ভাবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই ১৯৯৬ সালে জাতিসংঘ এই দিনটিকে বিশ্ব টেলিভিশন দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। টেলিভিশন উদ্ভাবনের এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সারা দেশে বিশ্ব টেলিভিশন দিবস পালন করা হয়। টেলিভিশন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ টেলি অর্থ দূরত্ব আর লাতিন শব্দ ভিশন অর্থ দেখা। টেলিভিশনে একই সঙ্গে ছবি দেখা ও শব্দ শোনা যায়।

টেলিভিশনই প্রথম বিশ্বটাকে মানুষের ঘরের মধ্যে এনেছিল। টেলিভিশন আবিষ্কারের পর রুশ বংশোদ্ভুত প্রকৌশলী আইজাক শোয়েনবারগের কৃতিত্বে ১৯৩৬ সালে প্রথম টিভি সম্প্রচার শুরু করে বিবিসি। আর বাণিজ্যিক ভাবে টেলিভিশন চালু হয় ১৯৪০ সালে। ঘরে বসেই মানুষ তখন সারা বিশ্বের খবরাখবর দেখতে ও শুনতে পায়। উপভোগ করতে পারে বিনোদন। জানতে পারে পৃথিবীর অজানা কথা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টেলিভিশনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সূচিত হয়। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই মুদ্রণ মাধ্যমকে ছাপিয়ে জায়গা করে নেয় সম্প্রচার মাধ্যম। বর্তমান বিশ্বে টেলিভিশন সব থেকে শক্তিশালী প্রচার মাধ্যম হিসেবে বিবেচেত হয়ে আসছে।

টেলিভিশনের মূল ধারণা হচ্ছে শব্দ ও ছবিকে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে ট্রান্সমিট করা। মূলত তিনটি প্রযুক্তির সমন্বয়ে সৃষ্ট হয় টেলিভিশনের আউটপুট। টিভি ক্যামেরা; যার কাজ হচ্ছে শব্দ ও ছবিকে তড়িৎ-চৌম্বকীয় সংকেতে রূপান্তর করা, টিভি ট্রান্সমিটার; যার কাজ হচ্ছে এই সংকেতকে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে প্রেরণ করা এবং টিভি সেট (রিসিভার), যার কাজ হচ্ছে এই সংকেত গ্রহণ করে তাকে আগের ছবি ও শব্দে রূপান্তরিত করা।

বাংলাদেশ টেলিভিশন আসে ১৯৬৪ সালে। ঐ বছরের ২৫ ডিসেম্বর সাদা-কালো সম্প্রচার শুরু করে। ১৯৮০ থেকে শুরু হয় রঙিন সম্প্রচার। একুশ শতকে গোটাবিশ্বে টেলিভিশনকেই সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রযুক্তির উৎকর্ষে ও সময়ের দাবিতে বাংলাদেশেও গণমাধ্যমে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে টেলিভিশন। প্রতিদিনের খবরাখবর ও মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এখন টেলিভিশনের গুরুত্ব অপরিসীম।

১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর বেসরকারি উদ্যোগে টেলিভিশনের সম্প্রচার শুরু হয়েছিল। ঢাকা শহরের ডিআইটি (বর্তমান রাজউক ভবন) থেকে তিনশ ওয়াট ট্রান্সমিটারের সাহায্যে ঢাকা ও এর আশপাশে দশ মাইল এলাকার জন্য প্রতিদিন তিন ঘণ্টার অনুষ্ঠান প্রচার করা হতো।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনে, ১৯৭২ সালে টেলিভিশনকে জাতীয়করণ করে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) নামকরণ করা হয়। আগে এটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু সীমিত সম্প্রচার এলাকা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭৫ সালের ৬ মার্চ ডিআইটি থেকে টেলিভিশন কেন্দ্র রামপুরায় স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে ১২টি উপকেন্দ্রের মাধ্যমে সারাদেশে পঁচানববই ভাগেরও বেশি এলাকা টিভি সম্প্রচারের আওতায় এসেছে।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হচ্ছে ১৯৮০ সালে রঙিন অনুষ্ঠান সম্প্রচার চালু। বিটিভির সম্প্রচার পরিধি বাড়াতে অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে সরকারি টেলিভিশন হিসেবে বিটিভি, বিটিভি ওয়ার্ল্ড ও সংসদ টিভি চালু রয়েছে। এছাড়া দেশে ৪৫টি বেসরকারি টেলিভিশন অনুমোদন পেয়েছে, যার মধ্যে ৩৫টি সম্প্রচারে রয়েছে।
পঞ্চাশের দশকে টেলিভিশন গণমাধ্যমের ভূমিকায় উঠে আসে। সাম্প্রতিক সময়ের মোবাইল রেভলিউশন এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দাপটেও টেলিভিশন মাধ্যমের জনপ্রিয়তায় তেমন কোনও প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। টেলিভিশন প্রথম থেকেই ছিল সর্বপ্রধান গণমাধ্যম। বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে যেখানে মোবাইল ব্যবহারকারীদের ৫০ শতাংশেরও বেশি ফিচার ফোন ব্যবহার করেন, স্মার্টফোন নয়, সেখানে টেলিভিশনই বিনোদনের মূল মাধ্যম। বর্তমান সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি বড় জায়গা দখল করলেও টেলিভিশনের গুরুত্ব কমেনি।

প্রযুক্তির উৎকর্ষে ও সময়ের দাবিতে বাংলাদেশেও গণমাধ্যমে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে টেলিভিশন। প্রতিদিনের খবরাখবর ও মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এখন টেলিভিশনের গুরুত্ব অপরিসীম। টেলিভিশন আমাদের অত্যন্ত প্রিয় গণমাধ্যম। প্রতিটি ব্যক্তির জীবনে টেলিভিশনের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি, জানতে পারি এবং আমাদের বিনোদন যোগাতেও টেলিভিশন অতুলনীয়। এটি বিনোদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ