শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
সোমবার ● ১৮ নভেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » বিশেষ সংবাদ » পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে ৪ গ্রামের ভিটে মাটি বিলিন হতে চলেছে
প্রথম পাতা » বিশেষ সংবাদ » পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে ৪ গ্রামের ভিটে মাটি বিলিন হতে চলেছে
৩৫ বার পঠিত
সোমবার ● ১৮ নভেম্বর ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে ৪ গ্রামের ভিটে মাটি বিলিন হতে চলেছে

---খুলনার পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে ৪ গ্রাম বিলিনের হওয়ার পথে। মসজিদ, পীরের মাজার, কবরস্থানসহ অসংখ্য মানুষের ভিটেমাটি আজ কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলার কপিলমুনি ও হরিঢালীর ইউনিয়নের ৪ গ্রামের ৩০-৪০ ভাগ ভূমি ও একটি বাজারের বৃহৎ অংশ আজ কপোতাক্ষ ভাঙ্গনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছ। সরেজমিনে ভাঙ্গন কবলিত ওই এলাকায় গেলে ক্ষতিগ্রস্ত অসংখ্য অসহায় মানুষ ছুটে আসেন। তারা বলেন, পাইকগাছা উপজেলার ১নং হরিঢালী ও ২নং কপিলমুনি ইউনিয়নের দরগাহমহল, রামনাথপুর, হাবিবনগর, মালতের আংশিক ও আগড়ঘাটা বাজারের সিংহভাগ এখন কপোতাক্ষ নদের পেটে। এই গ্রামগুলোতে ছিল হাজার হাজার বসতবাড়ি, স্কুল, দরগাহ মহল, জামে মসজিদ, পীর মিয়াউদ্দীনের মাজার ও শতশত কবর নদীতে ভেঙ্গে গেছে। ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করার জন্য কয়েকটি কবর স্থানন্তরও করা হয়েছে। উল্লেখিত ৪ গ্রাম ও আগড়ঘাটা বাজার সবমিলে প্রায় ২ হাজার একর জমি বিলীন হওয়ায় শতশত পরিবার আজ ভিটে ও ফসলী জমি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ৮০’র দশকে ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় নদের ঐপার অর্থাৎ পার-রামনাথপুরে চরপড়ে শতশত বিঘা জমি জেগে উঠেছে। সেখানে অনেকে আবার ভূমি বন্দোবস্ত নিয়ে দখল করে ঘরবাড়ি করে বসে আছেন। কেউ আবার বিঘার পর বিঘা জমিতে মৎস্য ঘের করে বসে আছেন। ফলে নদীর ভাঙ্গন কুলের মানুষের বোবা কান্না আজও থামেনি। বাপ দাদার ভিটে মাটির হারানোর কষ্ট যন্ত্রণা তাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। বিঘার পর বিঘা জমি বসতবাড়ি আজ কপোতাক্ষের পেটে। আশি বছরের বৃদ্ধা সৈয়েদা রিজিয়া বেগম নদীর দিকে চেয়ে শশুরের ভিটে হারানোর কষ্টের বিলাপ করতে থাকেন, তাকে বলতে শোনা যায়, হায়রে নদী, বাগান, উঠোন, ঘর, সব নিলি আমরা এখন যাবো কই। ভাঙ্গনকুলে সৈয়দ রহুল আমীনের পরিবারের ১০ বিঘা সম্পত্তি ছিল, যার মধ্যে ছিল বসত বাড়ি, পুকুর, পোল্ট্রি ফার্ম, মৎস্য ফার্ম, ফসলী জমি, সৈয়দ সালাতুল্লাহের ৪ টি বসত বাড়ি, পুকুর ২ টি, পোল্ট্রি ফার্ম, ফসলী জমি, শেখ মতির ২টি ঘর, বারু মন্ডলের ৩টি ঘর, দ্বীনুর ২ টি ঘর, শেখ সাজ্জাত আলীর ২টি ঘর, শেখ আব্দুল মান্নানের ২টি ঘরসহ অসংখ্য টিউবওয়েল কপোতাক্ষের গহীন গহ্বরে নিমজ্জিত হয়েছে। ভাঙ্গন এমন অবস্থানে আছে যে অতি অল্প দিনের মধ্যে ৩৬ হাজার ভোল্টেজ প্রবাহিত বিদ্যুৎ সরবরাহের খুটি হয়তো নদী গর্ভে চলে যাবে। খুঁটি নদীতে গেলে পাইকগাছা-কয়রা এই বৃহত্তর দু’টি উপজেলার বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন হয়ে পড়বে এমন অশংকা এলাকাবাসীর। স্থানীয়রা জানান,পূর্বের স্থানে এস এ খতিয়ান অনুযায়ী নদী খননসহ নদী ভাঙ্গন রোধকল্পে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে একটি গণ-স্বাক্ষরিত আবেদন করেন ভুক্তভোগীমহল। যার ফলে সে অনুযায়ী ৩ বছর আগে নদ খননের কাজ শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খুলনার আমীন ট্রেডার্স। ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নদ কাটা কাজ প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট দেয় সরকার। স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, ভাঙ্গন রোধে বিকল্প হিসেবে নদের পূর্বের সীমানা এসএ খতিয়ান অনুযায়ী খনন করলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পুরাতন নদীর ২টি মুখে আজও বাঁধ না দেওয়ায় ভাঙ্গন বন্ধ হচ্ছে না, তাই প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে। ফলে প্রতিদিনই ভিটে মাটি হারাচ্ছেন কোন না কোন পরিবার, আর ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের বাজেট করা কোটি কোটি টাকা। এমন অবস্থাতে সম্প্রতি পুরাতন নদের মুখে হাতেগোনা কিছু বালির বস্তা দিলেও সেটা নদীর স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সম্পূর্ণ কাজ বুঝে দেওয়ার আগেই নতুন খনন করা নদীর অনেক অংশে পলি পড়ে উঁচু হয়ে গেছে। নতুন খনন করা নদীর ভাঙ্গন কুল দরগাহমহলের বাসিন্দা শেখ আব্দুর রহিম (৫৫) বলেন, নদের ওপারে আমার বাপের ভিটা ছিল, আমরা সব হারিয়েছি, একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার বাপ-চাচাদের ৬ একর ৬৭ শতক জমি ছিল, আজ তার ১ শতক জমিও নেই, ভিটে মাটি হারিয়ে তিনি অন্য জায়গায় বসবাস করছেন। আমজাদিয়া এতিম খানার ক্বারী মোঃ শাহাদাৎ হোসাইন বলেন, নেতৃবৃন্দ, চেয়ারম্যান, মেম্বরসহ অনেকেই ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন, আশ্বস্ত করেছেন ভাঙ্গন রোধ করার কিন্তু অদ্যবধি কোন কাজ হয়নি। যা আমাদের জন্য দুঃখজনক। বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ সালাম উল্লাহর স্ত্রী আজিজার (৭২) এর বসতবাড়ি ছিল ২বিঘা জমিতে, ৪টি ঘর, ১টি গোয়াল ঘর, সীমানা প্রাচীর ও উঠান নদীতে চলে গেছে নদ ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এক ইঞি জমিও অবশিষ্ট নেই। তার পরিবার এখন অন্য গ্রামে বসত করছেন। সৈয়দ আবুল কালাম (৭০) বলেন, আমার উঠান পুকুর সহ ২ বিঘা ভিটে বাড়ি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। ভিটেমাটি হারিয়ে আমার পরিবার এখন নিঃস্ব। পাশের গ্রামে বাড়ি ভাড়া করে বসত করছি। সৈয়েদ মিজান বলেন, ভাঙ্গনের কবলে পড়ে আমার বাড়ি ৪ বার সরিয়েছি, সর্বশেষ খুলনা-পাইকগাছা প্রধান সড়কের ধারে ঘর বেঁধেছি, কিন্তু এখানেও নদ ভাঙ্গনের অব্যাহত হুমকির মুখে আমার বাড়ি-ঘর। তবে এই ভাঙ্গন রোধে নদের কুলে খুব দ্রুত ব্লক ও বালির বস্তা দিলে হয়তো কিছু দিন টিকে থাকতো কষ্টে বাঁধা ঘর। কপিলমুনি মেহেরুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি শেখ আছাদুর রহমান পিয়ারুল বলেন, দরগাহমহলে আমার পূর্ব পুরুষদের ভিটে ছিল। সেখানে আমাদের একটি পারিবারিক কবরস্থানও ছিল, যা প্রায় ৪০ বছর আগে নদে ভেঙ্গে যায়। এরপর পুনরায় একটি পারিবারিক কবর স্থান গড়ে তোলা হয় সেটাও নদে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ওই দু’টি কবরস্থান থেকে আমার পরিবারের ৭জনের কবর অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বরত মোঃ আমীন বলেন, কাজ চলমান রয়েছে। স্রোতের কারনে একটু বিলম্ব হচ্ছে। সেটা নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার কে জানিয়েছি।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যাণার্জী বলেন, খননের কাজ শেষ হয়েছে, তবে কিছু জায়গায় নতুন করে পলি পড়েছে, পলি অপসারণ করতে বলা হয়েছে। আর পুরাতন নদীর মুখে বাঁধ দেওয়ার জন্য বালির বস্তা ফেললেও নদীর স্রোত বেশি থাকায় সেটা টিকছেনা, তবে স্রোত একটু কমলেই অতিদ্রুত বাঁধের কাজ শুরু করবে ঠিকাদার।





বিশেষ সংবাদ এর আরও খবর

বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা
বাংলাদেশে ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যে: জাতিসংঘ বাংলাদেশে ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যে: জাতিসংঘ
পেলেন না মুক্তিযোদ্ধার অন্তিম সম্মান; বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্বামীর কবরে শায়িত মতিয়া চৌধুরী পেলেন না মুক্তিযোদ্ধার অন্তিম সম্মান; বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্বামীর কবরে শায়িত মতিয়া চৌধুরী
পাইকগাছায় দুর্গা পূজার সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথি না করায় অনুষ্ঠান বন্ধের হুমকি ! পাইকগাছায় দুর্গা পূজার সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথি না করায় অনুষ্ঠান বন্ধের হুমকি !
অস্তিত্ব সংকটে খুলনা বিভাগের ৩৭ নদী অস্তিত্ব সংকটে খুলনা বিভাগের ৩৭ নদী
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘাপটি মেরে থাকা চরমপন্থীরা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘাপটি মেরে থাকা চরমপন্থীরা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে
উপজেলা চেয়ারম্যানদের ৭৭ শতাংশই ব্যবসায়ী : সুজন উপজেলা চেয়ারম্যানদের ৭৭ শতাংশই ব্যবসায়ী : সুজন
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিপীড়নে ডিএসএ’র ব্যবহারে উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিপীড়নে ডিএসএ’র ব্যবহারে উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের
পাইকগাছায় চিংড়ী খাত ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে চিংড়ী ও মৎস্য খাত রক্ষায় বিভিন্ন সংগঠনের সাথে মতবিনিময় পাইকগাছায় চিংড়ী খাত ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে চিংড়ী ও মৎস্য খাত রক্ষায় বিভিন্ন সংগঠনের সাথে মতবিনিময়

আর্কাইভ