শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১

SW News24
মঙ্গলবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » কৃষি » নড়াইলে কৃষি কাজে তিন ভাইয়ের সাফল্য, প্রতি মাসে আয় প্রায় লাখ টাকা
প্রথম পাতা » কৃষি » নড়াইলে কৃষি কাজে তিন ভাইয়ের সাফল্য, প্রতি মাসে আয় প্রায় লাখ টাকা
৪৯ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

নড়াইলে কৃষি কাজে তিন ভাইয়ের সাফল্য, প্রতি মাসে আয় প্রায় লাখ টাকা

--- ফরহাদ খান, নড়াইল ;  নড়াইলে কৃষি কাজে তিন ভাইয়ের সাফল্য এলাকায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা দিয়েছে। চাকরির পেছনে না ছুটে তিন ভাই তাদের বাড়ির পাশের ক্ষেতে গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার। ফলে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন তারা। প্রতি মাসে আয় করছেন প্রায় এক লাখ টাকা। তাদের এই সাফল্য এলাকায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন অনেক বেকার যুবক।

নড়াইলের কালিয়া পৌরসভাধীন ঘোষপাড়ার তরুণ উদ্যোক্তা রমজান খান (২২) মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোতে না পারলেও কৃষি কাজে চমক দেখিয়েছেন। প্রায় সাত বছর আগে থেকে কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন তিনি। প্রথমে শশা চাষাবাদের মধ্যদিয়ে কৃষি কাজে যুক্ত হন তরুণ উদ্যোক্তা রমজান। এ কাজে কোনো অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ না থাকায় ইউটিউব দেখে পরবর্তীতে মালচিং পদ্ধতিতে শশার পাশাপাশি আগাম জাতের টমেটো, বেগুন, মরিচ ও বাঁধাকপির চাষাবাদ শুরু করেন রমজান। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি রমজানকে। এই কৃষি খামারের সাথে যুক্ত হয়েছেন রমজানের আপন বড় দুই ভাইও। যাদের মধ্যে প্রবাসী এক ভাইও আছেন। এই কৃষি খামার থেকে খরচ বাদেই প্রতি মাসে আয় হচ্ছে প্রায় এক লাখ টাকা।

এ তথ্য জানিয়ে রমজান বলেন, এ বছর শুরুতে ১৮০ টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি করেছি। গত ১২ বছরের মধ্যে টমেটোর দাম সর্বোচ্চ পেয়েছি। এছাড়া ‘সাথী ফসল’ হিসেবে টমেটোর সঙ্গে বাঁধাকপির চাষ করে সাফল্য পেয়েছি। পাশের দু’টি জমিতে বেগুন ও মরিচ আবাদ হয়েছে। তিনটি জমি মিলে বর্তমানে ৫০ শতকে চাষাবাদ করছি। আমাদের তিন ভাইয়ের এই কৃষি খামারে আরো কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ভালো ফলন পেতে কৃষি কর্মকর্তারা সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন।

‘কৃষি একটি ভালো বিজনেস’ (ব্যবসা) উল্লেখ করে সফল কৃষি উদ্যোক্তা রমজান তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, অনেক শিক্ষিত তরুণ বা বেকার যুবক চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হাতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। অনেকে ধারদেনা ও ঋণের টাকায় বিদেশ যেতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন। অথচ তাদের কৃষি জমি থাকতেও সেইদিকে একটুও খেয়াল করেন না।

রমজানের বড় ভাই ওয়েস খান (৪২) বলেন, আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে টমেটো, বেগুন, মরিচ ও বাঁধাকপির চাষ করে লাভবান হয়েছি। তবে, আমাদের সমাজের অনেকে চায়ের দোকানে বসে অলস সময় কাটালেও বাস্তবে কিছুই করেন না। অথচ ভালো কিছু করার মধ্যে কত যে আনন্দ, তা আমরা তিন ভাই বাস্তবে উপভোগ করি। টাটকা সবজিগুলো বাজারে নিলে আগেভাগে বিক্রি হয়ে যায়।

আরেক ভাই এলাহী খান (৩৫) বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর বিদেশে ছিলাম। এরপর দেশে এসে ছোট ভাই রমজানের সঙ্গে কৃষি কাজে যোগ দিয়েছি। বিদেশে কঠোর পরিশ্রমের চেয়ে ক্ষেতখামারে কম কষ্টে অনেক ভালো আছি। সব ফসলের ফলনও ভালো পাচ্ছি।

পাশের সালামাবাদ ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের জব্বার তালুকদার (২৬) বলেন, রমজানসহ তিন ভাইয়ের সাফল্য দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবকও এ ধরণের কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। আমিও একজন স্মার্ট কৃষি উদ্যোক্তা হতে চাই। রমজানদের কৃষি খামার দেখে খুব লেগেছে। তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে এখান থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি।

একটি বীজ কোম্পানির কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, রমজানদের ক্ষেতে বাহুবলি টমেটো, প্রীতম ও সুপার হট বেগুন চাষাবাদ করা হয়েছে। এই জাতগুলো এখানকার মাটি ও আবহাওয়ায় উপযোগী। আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদে ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি এলাকার বেকারত্ব দুর হচ্ছে।

নড়াইলের কালিয়া পৌরসভার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুবেল হাওলাদার জানান, রমজানদের তিন ভাইয়ের সাফল্য এলাকায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা দিয়েছে। এখানে নিয়মিত বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষাবাদে গুরুত্বরোপ করা হয়। মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় এইসব ক্ষেতখামারে সরাসরি কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষাবাদে কৃষি বিভাগ সব সময় সহযোগিতা করে থাকে। কালিয়া তথা নড়াইল জেলা থেকে উৎপাদিত সবজি হোক শতভাগ বিষমুক্ত, কৃষি বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিক-নির্দেশনায় আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।





আর্কাইভ