শিরোনাম:
পাইকগাছা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

SW News24
সোমবার ● ৮ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » পরিবেশ » বৃক্ষ মানুষের পরম বন্ধু
প্রথম পাতা » পরিবেশ » বৃক্ষ মানুষের পরম বন্ধু
১৯০৮ বার পঠিত
সোমবার ● ৮ আগস্ট ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বৃক্ষ মানুষের পরম বন্ধু

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান

বৃক্ষ মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। বৃক্ষ ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। বৃক্ষহীন পৃথিবীতে প্রাণের অস্থিত্ব কল্পনাও করা যায় না। গাছ ছাড়া পৃথিবীতে বসবাস করা সম্ভব নয়। দেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বনাঞ্চলের সেই সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের বিকল্প নেই। মানুষের ত্যাগ করা কার্বন-ডাই-অক্সসাইড বাতাস থেকে গাছ গ্রহণ করে পরিবেশ শিতল রাখছে। আর গাছ থেকে পাওয়া অক্সিজেন গ্রহণ করে আমরা বেঁচে থাকি। মানুষের জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য। বৃক্ষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাছ মানুষের পরম বন্ধু। মানুষের উপকারে গাছের থেকে এমন বন্ধু আর হয় না। বৃক্ষ শুধু মানষের বন্ধু নয়। পরিবেশ ও প্রকৃতি জীব জগতেরও পরম বন্ধু।

বৃক্ষ মানুষের এতো উপকারে আসে তারপরও বৃক্ষের নিধনযোগ্য চলেছেই। নানা অজুহাতে মানুষ বৃক্ষ নিধন করে চলেছে। দ্রুত শহরায়ন, শিল্পায়ন, আসবাবপত্র তৈরী, শিল্পের কাঁচা মাল তৈরী, জ্বালানী কাঁঠের সরবরাহ ইত্যাদি অজুহাতে বনাভূমি উজাড় হচ্ছে। গাছ কমে যাওয়ায় প্রকৃতির ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়ছে। কার্বন-ডাই-অক্সসাইড, কার্বন-মনো-অক্সসাইড, লিথেন সহ প্রভৃতি ক্ষতিকর গ্যাসের প্রভাবে বায়ুমন্ডল দূষিত হচ্ছে। এক জরিপে জানা গেছে, জ্বালানী থেকে শুরু ঢাকা শহরে সাত টন সিসা ছড়াচ্ছে। বিশ্বের বায়ুমন্ডলে গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ায় ওজন স্তরে ক্ষয় হয়ে ছিদ্র দেখা দিয়েছে। এ সব ছিদ্র পথে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি বায়ুমন্ডল ও প্রকৃতির উপর ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে জীব জগত বিরাট হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এ ছিদ্র মেরামোত না হলে জীব জগতের মারাত্মক ক্ষতি হবে। তবে একমাত্র বৃক্ষই পারে এ ছিদ্র মেরামোত করতে। কারণ বায়ুমন্ডল থেকে ক্ষতিকর গ্যাসগুলো গাছ শোষন করে নেয় এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে বায়ুমন্ডল শিতল রাখে। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় বৃক্ষরোপন করে বনাঞ্চল তৈরী ও সংরক্ষণ জরুরী।

ফলদ বৃক্ষ পরিবেশে রক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঔষধ তৈরীর জন্য ভেষজ গাছ খুবই প্রয়োজন এবং এ সব ভেষজ গাছ খুবই মূল্যবান। বনজ ও ফলদ বৃক্ষের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা ধরণের ভেষজ গাছ লাগিয়ে অনেকেই অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানাগেছে, ৫০ বছর বয়স্ক একটি ফল গাছ তার সারা জীবনে মানুষের যে উপকার করে তার আর্থিক মূল্য ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকায় গিয়ে দাড়ায়। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, সুস্বাস্থ্যের জন্য একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ১১৫ গ্রাম ফল খাওয়া দরকার। কিন্তু প্রয়োজন ও প্রাপ্তি ব্যবধানে আমরা খেতে পারছি মাত্র ৪০-৪৫ গ্রাম। আমাদের আর্থ সামাজিক অবস্থায় চড়াদামে বিদেশী ফল আমদানী করে এ চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তাই স্বাদে, গন্ধে ও পুষ্টিতে সেরা আমাদের দেশীয় ফল গুলোর উৎপাদন সারা বছর দেশ ব্যাপী বাড়িয়ে তুলতে হবে।

বর্তমান বাংলাদেশে ৭০ প্রকারের দেশী ফল জন্মে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০০৫-০৬ সালে দেশের প্রধান ফল গুলো যেমন আম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁয়ারা, পেপে, তরমুজ চাষের আওতায় ১ লাখ ২১ হেক্টর জমি ছিল। এর থেকে ফলের মোট উৎপাদন হয় ২৯ লাখ ৫১ হাজার ৭শ মেট্রিক টন। এসব ফলের শতকারা ৬০.৯০ ভাগ উৎপন্ন হয় ৪/৫ মাসে । আর বাকী ৩৯.১০ ভাগ ফল অন্য ৭/৮ মাসে। হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০ থেকে ৩০ মেট্রিক টন তাজা ফল মুল, সাক-সবজী ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ পূর্ণ এশিয়ার দেশ গুলোতে রপ্তানি হয়ে থাকে।

পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশ প্রয়োজনের তুলনায় মোট বনভূমির পরিমাণ খুবই কম। প্রয়োজনী বৃক্ষ রোপন ও সংরক্ষণ করাও হচ্ছে না। জনবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্টি দূর্যোগ মোকাবেলায় বৃক্ষরোপনকে সামাজিক আন্দোলনে পরিনত করতে হবে। বৃক্ষ সম্পদ বৃদ্ধি, সুস্থ্য ও নির্মল পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষে দেশের জাতীয় ভাবে বৃক্ষরোপন ও সংরক্ষনের ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যক্তি স্বার্থে, জাতীয় স্বার্থে এবং আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় সুস্থ্য ও সুন্দর পরিবেশ পেতে দেশের প্রতিটি নাগরিককে বৃক্ষরোপন ও সংরক্ষনের দায়িত্ব নিতে হবে।





আর্কাইভ