মঙ্গলবার ● ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » পরিবেশ » মাগুরার নদী গুলো নাব্যতা হারিয়ে মৃতপ্রায়
মাগুরার নদী গুলো নাব্যতা হারিয়ে মৃতপ্রায়
ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কখনোই, নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে বাঁচানোর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবী
এস আলম তুহিন , মাগুরা থেকে :
বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পলিবাহিত পানির প্রভাবে মাগুরা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা, মধুমতি, গড়াই, কুমার এবং ফট্কি নদী নাব্যতা হারিয়ে এর প্রত্যেকটিই এখন মৃতপ্রায়।
পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এসব নদীগুলো বর্ষা মৌসুমে যেমন তিরবর্তী এলাকাগুলোকে প¬াবিত করে তেমনি শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলোর বেশির ভাগ এলাকা শুকিয়ে চর জেগে ওঠে। ওই সব চরের কোথাওবা ধান চাষ হয় আবার কোথাওবা চলে গরু ছাগল চরানোসহ শিশুদের খেলাধূলা।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা এলকার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে ১৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ কুমার নদী মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে মাগুরা সদর উপজেলার নবগঙ্গা নদীতে মিশেছে।
এদিকে, ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলা থেকে ১৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ মধুমতী নদী মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাগেরহাট জেলার কচুয়া এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে পতিত হয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ গড়াই নদী মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় মধুমতি নদীতে মিলিত হয়েছে। আর ঝিনেদা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চিত্রা নদী প্রবাহিত হয়ে মাগুরার শালিখা উপজেলায় ঢুকে ফটকি নাম ধারণ করেছে।
অপরদিকে, চূয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় মাথাভাঙ্গা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে ২৩০ কিলোমিটার লম্বা নবগঙ্গানদী মাগুরা শহরের পাশ দিয়ে প্রাবহিত হয়ে নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার চিত্রা নদীতে মিশেছে।
তবে, কথনোই এগুলোর ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় মাগুরা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা, গড়াই, মধুমতি, কুমার ও ফটকি নদীর প্রত্যেকটিরই এখন করুণ দশা।
ইতিপূর্বে, নব্বইয়ের দশকে মাগুরা জেলার উজানের নদীগুলোকে বাঁচানোর লক্ষ্যে মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালী এলাকায় মাগুরা-ঢাকা মহাসড়কের উপর নবগঙ্গা নদীতে প্রায় ১শ’ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি ¯-ুইস গেট নির্মাণ করা হলেও তা ইপ্সিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যার্থ হয়েছে।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, মাগুরার নদীগুলো বাঁচাতে কখনোই ড্রেজিং-এর পদক্ষেপ নেয়নি সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে ধীরে ধীরে নদীগুলোর পরিণতি করুণ থেকে করুণতর হয়েছে অপ্রত্যাশিতভাবে।
স্থানীয় প্রবীণদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, একসময় এসব নদীর প্রত্যেকটিই ছিল অনন্ত যৌবনা। প্রতিটিই ছিল খরস্রোতা। এসব নদীতে চালানো হতো বড় বড় লঞ্চ, ষ্টিমারসহ অসংখ্য নৌযান। প্রবীণদের অনেকেই নদীগুলোর বর্তমান পরিণতিতে অতিশয় ব্যথিত। তারা নদীগুলো বাঁচানোর আশু পদক্ষেপ গ্রহণের দাবীও জানিয়েছেন দৃঢ়কণ্ঠে।
এ প্রসঙ্গে আলাপ করতে গিয়ে নবগঙ্গা নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী ভাষা সৈনিক প্রবীণ শিক্ষাবিদ খান জিয়াউল হক নবগঙ্গার করুণ দশা নিয়েই শুধু আক্ষেপ করলেন না, এ নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে এটিকে বাঁচিয়ে তোলার ফলপ্রসূ পদক্ষেপ দাবী করলেন। তার মতে, নদীগুলোর এ পরিণতির জন্য শুধু সংশিলষ্ট কর্তৃক্ষের উদাসীনতাই মূলতঃ দায়ী।
মাগুরার মৃতপ্রায় নদীগুলোর পরিণতির কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে মাগুরার পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী জানান , নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সম্প্রতি তারা যে সরকারি নির্দেশনা পেয়েছেন তা বাস্তবায়িত হলে এসব নদীগুলোর যৌবনই শুধু ফিরে আসবেনা, অনাকাঙ্খিত বন্যার হাত থেকেও সংশ্লি¬ষ্ট এলাকাগুলো রক্ষা পাবে।