শিরোনাম:
পাইকগাছা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
রবিবার ● ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » সাহিত্য » ভাষা আন্দোলনে একুশের ইতিহাস
প্রথম পাতা » সাহিত্য » ভাষা আন্দোলনে একুশের ইতিহাস
৫৯৭ বার পঠিত
রবিবার ● ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ভাষা আন্দোলনে একুশের ইতিহাস

---

সরদার মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন (বীরমুক্তিযোদ্ধা)

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্র“য়ারী ভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে সংগ্রাম করেছিল হাজার হাজার বাঙালী। একুশে ফেব্র“য়ারি বাঙালীর জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় ও ঐতিহ্যবাহী দিন। বাঙালীর জাতীয় জীবনের সকল চেতনার উৎস হচ্ছে এই দিনটি। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার ঐতিহাসিক দিন এটি। এই দিনে বাঙালীর তাজা রক্ত রাজপথ করেছিল রঞ্জিত। বাঙালীর রক্তঝরা এই দিনটিকে সারা বিশ্বে স্মরণীয় করে রাখতে ইউনেস্কো “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, সম্মান জানিয়েছে ভাষা শহীদদের প্রতি।

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র“য়ারী

আমি কি ভুলিতে পারি।”

তদানীন্তন পাকিস্তানের শাসক শ্রেনীর নির্দেশে অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছিল রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বার সহ অনেকের। সে দিন ২১ ফেব্র“য়ারী জাতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও অনেক পরে প্রাদেশিক ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। স্বাধীনতা লাভের পর তৎকালীন সরকার এই দিনটিকে জাতীয় ভাষা দিবস বা শহীদ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এখন ২০০০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একযোগে পালিত হওয়ার সিদ্ধান্ত ইউনেস্কো কর্তৃক গৃহিত হয়েছে।

বিশ্বের প্রতিটি জাতির রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। আর এ নিজস্ব ভাষাই হচ্ছে মাতৃভাষা। যেমন- বাঙালীদের মাতৃভাষা বাংলা, ইংরেজদের মাতৃভাষা ইংরেজি, আরবীয়দের মাতৃভাষা আরবী ইত্যাদি। কবির ভাষায় ‘যে ভাষাতে প্রথম বোলে, ডাকুন মায়ে মা মা বলে, সে ভাষাই আমাদের মাতৃভাষা।

মনে পড়ে, ১৯৫৭ সালে ২৩শে জুন পলাশীর কথা, মনে পড়ে ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের কথা। তারপর দুইশত বছর ইংরেজ শাসন এবং শোষণের হাত থেকে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীন হলো পাকিস্তান। তদকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ জিয়াউদ্দীন আহম্মদ প্রথম বাংলাকে উর্দ্দুর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন।

বাংলার জ্ঞান তাপস ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ “দৈনিক আজাদ” এ বলেন, অধিকাংশ জনসংখ্যার ভাষা হিসেবে বাংলাভাষা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। প্রথমবার পাকিস্তান জন্মের মাত্র তিন মাসের মধ্যেই ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে করাচি শিক্ষা সম্মেলনে কেন্দ্রিয় শিক্ষামন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের উদ্যোগে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার একটি প্রস্তাব পাস করিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

এর প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ঢাকার রাজপথে তদকালীন পূর্ব বাংলার ছাত্র-সমাজ এর বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ প্রকাশ করে। অপরদিকে পাকিস্তানের তদকালীন গভর্ণর কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে ঘোষণা দেন যে,

“Urdu and Urdu Shall be the only

state language of Pakistan.”

তখন জিন্নাহ্ সাহেবের এই কথার প্রতিবাদে ঝড় উঠলো দেশের ছাত্র সমাজ, আইনজীবি, বুদ্ধিজীবি, শ্রমজীবি, উকিল, মোক্তার, বাংলার আবালবৃদ্ধ, বণিতা সমন্বয়ে বলে উঠলো বাংলার Majority লোকের মাতৃভাষা বাংলা, বাংলা হবে আমাদের মাতৃভাষা। ১৯৪৮ সালে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ইংরেজির পাশাপাশি উর্দ্দু ভাষাতে অধিবেশনের কার্যক্রম রেকর্ড হওয়ায় এর প্রতিবাদ করেন এবং বাংলার স্বীকৃতির জন্য দাবী জানান। কিন্তু এ দাবী প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় পূর্ব বাংলার শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবি মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তাল হতে থাকে। মাতৃভাষা প্রীতি ও প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাঙালী জাতির ইতিহাস সারা বিশ্বে গৌরব দীপ্ত এক বিরল ইতিহাস। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ পর্যন্ত লাগাতার হরতালের ফলে পূর্ব বাংলার তদকালীন মূখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীন ছাত্রদের কাছে আত্মসমর্পন করেছিলেন এবং রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার মর্যাদার দাবীটি মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারী ঢাকার পল্টন ময়দানে খাজা নাজিম উদ্দীন মুসলিমলীগের এক সভায় ভাষন দিতে গিয়ে আবার বিদ্রোহ করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন এদেশের স্বাধীনতার অনুপ্রেরণা। সে প্রেরণা আমাদেরকে উপহার দিয়েছে ১৯৭১ এর মহান স্বাধীনতা। বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর যে চেতনায় প্রস্তাবনা পাস হয়েছে; ১৯৫২ সালের তদকালীন ভাষা সংগ্রামীরা সেই প্রেরণাকেই আপমার জনতার সামনে তুলে ধরেছিল। আর প্রতিষ্ঠিত হলো- সকল মাতৃভাষার মর্যাদা ও স্বীকৃতি।

একুশে ফেব্র“য়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও বাঙালী জাতির আনন্দ উৎসব। মহান ২১ ফেব্র“য়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পাওয়ায় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১৯৯৯ সালের ৭ই ডিসেম্বর উৎসবের আয়োজন করে। ২০০০ সালের ২১ ফেব্র“য়ারী ঢাকার পল্টন ময়দানে এ উৎসবটি পালিত হয়। দিনভর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা, আবৃতি, নাচগান ইত্যাদি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয় এ আনন্দ আয়োজনে।

একুশে ফেব্র“য়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদার দেয়ার ব্যাপারে সর্বপ্রথম সচেষ্ট হন ক্যানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম। এ দু’জুন আরও কয়েকজন মাতৃভাষা প্রিয় ব্যক্তিদের নিয়ে গড়ে তোলেন “মাদার ল্যাংগুয়েজ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড” নামক সংস্থা।

অবশেষে ১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বর ২১শে ফেব্র“য়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাবটি জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর ৩১তম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়। বিশ্বের ২৮টি দেশ এ সনদে স্বাক্ষর করে। বর্তমানে ২১শে ফেব্র“য়ারিতে বিশ্বের ১৮৮ টি দেশ অত্যন্ত আনন্দের সাথে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে পালন করছে।

১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে শহীদ এম,এ গফুর আওয়ামীলীগে যোগদান করেন এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি পাইকগাছা, আশাশুনি নির্বাচনী এলাকা থেকে খান-এ সবুরকে পরাজিত করে পাকিস্তান জাতীয় সংসদের সদস্য (এম এন এ) নির্বাচিত হন।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব এম,এন,এ ও এম,পি,এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন শহীদ এম,এ গফুর তাদের মধ্যে প্রধান। তিনি সাতক্ষীরা ন্যাশনাল ব্যাংক অপারেশন করে ১ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কাজে ব্যয় করেন। তাঁকে এই ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেন টাউনশ্রীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজাহিত ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার এবং বরিশালের এমএলএ নূরুল ইসলাম মঞ্জুর। শহীদ এম,এ গফুর শুধুমাত্র একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের একজন অন্যতম সংগঠক।

শহীদ এম,এ গফুর-এর অক্লান্ত ও অব্যাহত প্রচেষ্টায় মুক্তিযুদ্ধের ৯ম সেক্টর প্রতিষ্ঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি নবম সেক্টরের পরিচালনা যাবতীয় সহযোগিতা করতেন। ১৯৪৪ সালে তিনি বুধহাটা হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং দৌলতপুর বি.এল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলন শুরু হলে তিনি ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। পরবর্তীকালে তিনি ভাষা আন্দোলনে খুলনা জেলা কমিটির আহবায়ক নির্বাচিত হন। তাঁরই নেতৃত্বে খুলনার ভাষা আন্দোলন গতি লাভ করে। তিনি ১৯৭২ সালে ৬ জুন সাহাপাড়া গ্রামের কাছে কপোতাক্ষ নদীতে নকশাল বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান।





আর্কাইভ