বৃহস্পতিবার ● ৬ এপ্রিল ২০১৭
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » সুন্দরবনে মধু আহরণের মৌসুম শুরু হয়েছে
সুন্দরবনে মধু আহরণের মৌসুম শুরু হয়েছে
এস ডব্লিউ নিউজ ॥
সুন্দরবনে মধু ও মোম আহরণের মৌসুম শুরু হয়েছে। এ নিয়ে উপকূল এলাকায় মৌয়ালদের মধ্যে ব্যাপক তৎপরতা দেখা দিয়েছে। ১ এপ্রিল থেকে ১৫জন পর্যন্ত বনে মধু আহরণ চলবে। আড়াই মাস ব্যাপী মৌয়ালরা সুন্দরবনে মধু আহরণ করবে। তবে এখনও সনাতন পদ্ধতিতে মধু আহরন করায় মধুর পরিমাণ কমছে; ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বন। মশাল দিয়ে ধোয়া দেখার সময় অনেক মৌমাছি আগুনে পুড়ে মারা যায়। আবার অনেক সময় না বুঝে পুরোমৌচাক কেঁটে ফেলেন মৌয়ালরা। এসব কারণে সুরন্দবনের মধু সম্পদ হুমকির মুখে পড়েছে।
বন বিভাগ সুত্রে জানাগেছে, মৌয়ালরা বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট (বিএলসি) এবং পাস পারমিট নিতে শুরু করেছে। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ১৫জন পর্যন্ত মধু ও মোম আহরণ চলবে। গত বছর একবার পাশ নিয়ে এক মাস বনে থাকতে পারতো মৌয়ালরা। এ বছর থাকতে পারবে ২ সপ্তাহ। এরপর আবারও ২ সপ্তাহের পাশ নিয়ে বনে ঢুকতে হবে।
সুন্দরবন বন বিভাগ থেকে জানাগেছে, সুন্দরবন পশ্চিম ও পূর্ব বিভাগে এবছর মধু আহরণ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ১৬০ কুইন্টাল এবং মোম ৭৯৩ কুইন্টাল। এর মধ্যে পশ্চিম বনবিভাগে ২ হাজার ২৫০ কুইন্টাল ও মোম ৫৬৫ কুইন্টাল। এরমধ্যে খুলনা রেঞ্জে ৭৫০ কুইন্টাল ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে ১৫শ কুইন্টাল মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। প্রতি কুইন্টাল মধু আহরণের জন্য ৭৫০ টাকা এবং মোমের জন্য ১ হাজার টাকা রাজস্ব দিতে হবে বন বিভাগকে। সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য মোয়ালদের মাথাপিছু ৮ টাকা রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। সুন্দরবন থেকে সুন্দরী, খলিসা, গরাণ, গেওয়া, বাইন ও কেওড়া গাছের মধু আহরণ করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বনের জীববৈচিত্রের উপর প্রভাব পড়েছে। এর পাশাপাশি এখনো সনাতন পদ্ধতিতে মধু আহরণ করায় মধুর পরিমাণ কমছে। বনবিভাগ সূত্রে জানাগেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মধু আহরণ হয়ে ছিল ২ হাজার ২৩১ কুইন্টাল, মোম ৫১৩ কুইন্টাল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা কমে দাড়ায় ১ হাজার ৯২৩ কুইন্টাল ও মোম ৪৮৭ কুইন্টাল।
মৌয়ালদের কাছ থেকে জানাগেছে এখনো তারা সনাতন পদ্ধতিতে মধু আহরণ করছেন। মৌচাক থেকে মৌমাছি তাড়াতে খড়-কুটো বা বনের লতা-পাতা দিয়ে মশাল তৈরী করেন। মৌচাক কাঁটার সময় মশাল জ্বালিয়ে ধোয়া তৈরী করে মৌচাকে ধোয়া দিয়ে মৌমাছি তাড়ানো হয়। এসময় মৌয়ালরা মাথায় টুপি, হাতে ও মুখে কাপড় পেচিয়ে মৌচাক কাঁটেন। তাড়াহুড়োর কারণে অনেক মৌচাক আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন। এতে অনেক মৌমাছি মারা যায়। এছাড়া না বুঝে পুরো চাক কেঁটে ফেলেন। এতে মৌমাছির বাচ্চা ও ডিম নষ্ট হয়ে যায়। এসব কারণে আগের তুলনায় মৌচাক কমে গেছে। মৌয়ালরা জানান, আগুন না জ্বালিয়ে মেশিনের সাহায্যে ধোয়া দিয়ে মৌচাক কাঁটা যায়। কিন্তু মেশিন ও মুখের মাক্সের দাম বেশি হওয়ার কারণে তারা মেশিন কিনতে পারে না। তাছাড়া মহাজনের অধিনে যে সব মৌয়ালরা মধু আহরণ করতে যায় তাদেরকেও মেশিন বা মাক্স না দেয়ায় সনাতন পদ্ধতিতে মধু আহরণ করতে হচ্ছে। এছাড়া অসর্তকতার কারণে মশালের আগুন পড়ে বা মশাল বনের মধ্যে ফেলে দেওয়ায় ইতিপূর্বে একাধিক বার বনে আগুন লাগার ঘটনা ঘোটেছে।
এ ব্যাপারে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাঈদ আলী জানান, মৌয়ালরা কেউ যাতে মৌমাছি না পোড়ায়, পুরোচাক না কেঁটে ফেলেন এবং ব্যবহৃত মশাল যেন বনের মধ্যে ফেলে না দেয় সেজন্য প্রতিবছর কিছু সংখ্যা মৌয়ালকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তবে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সব মৌয়ালকে এখনো প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। বাঘের হামলা এড়াতে সতর্ক ও দলবদ্ধ ভাবে মৌয়ালদের চলাফেরা করা পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া চলতি মধু আহরণ মৌসুমে মৌয়ালদের নির্বিঘেœ মধু আহরণে বনদস্যুদের তৎপরতা রোধে টহল জোরদার করা হয়েছে।