শনিবার ● ৮ এপ্রিল ২০১৭
প্রথম পাতা » সর্বশেষ » মাগুরায় পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের ৩ কোটি টাকা নিয়ে জনতা সমবায় সমিতি পালিয়েছে
মাগুরায় পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের ৩ কোটি টাকা নিয়ে জনতা সমবায় সমিতি পালিয়েছে
মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরা শহরতলীর পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ৩ কোটি নিয়ে পালিয়েছে জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি লিমিটেড ।
তিল তিল করে জমানো টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় প্র্য়া প্রতিদিনই তালাবদ্ধ অফিসের সামনে ধরনা দিচ্ছেন এ প্রতিষ্ঠানের প্রতারিত গ্রাহকরা । এ ঘটনায় মাগুরা সদর থানায় মামলা হয়েছে ।
চায়ের দোকান থেকে আয়ের একটি অংশ জনতা সমবায় সমিতিতে জমা করতেন নিজাম উদ্দিন । দুই বছরে সঞ্চয়ের পরিমান হয়েছিল প্রায় ৪২ হাজার টাকা । টাকা আনতে গিয়ে দেখেন অফিস তালাবদ্ধ । পরে জানতে পারেন এই সংস্থার সবাই এখন লাপাত্তা ।
শুধু নিজামই নয় , তার মতো প্রায় ৫০০ গ্রাহকের অবস্থা এখন এমন । ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে , কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া গ্রামের খন্দকার আবুল কালাম আজাদ জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন । তিনি মাগুরা শহরের আল আমিন মার্কেটের ২য় তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করতেন । খন্দকার আবুল কালাম আজাদের সাথে কার্যক্রম পরিচালনায় ছিলেন শাহরিয়ার রহমান নামে এক কর্মকর্তা ,হিসাবরক্ষক ডলি ,একজন পিয়ন ও চারজন মাঠকর্মী । স্থানীয় চায়ের দোকানি ,ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ,ভ্যান-রিকসা ও দিন মজুরদের র্টাগেট করে দিয়ে কার্যক্রম, শুরু করে তারা । এভাবে ৮ বছরে প্রতিষ্ঠানটি অনন্ত ৫০০ গ্রাহক তৈরি করে ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে ,কতৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড মাগুরায় প্রায় ৮ বছর ধওে ব্যাংকিংসহ ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে । স্থানীয় দরিদ্র গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত তিন কোটি টাকা । টাকা আতœসাতের অভিযোগে প্রতারিত গ্রাহকদের পক্ষথেকে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেছেন আবদুল আজিজ ।
মামলার নথি ও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায় মাগুরা শহরের ভায়নার মোড়ে আল-আমিন মার্কেটের ২য় তলায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালিত হত । কিন্তু গত বৃহস্পতিবার থেকেই কার্যালয়ে তালা ঝুলছে । প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দেখা যাচ্ছে না ।
মাগুরা সমবায় অফিসথেকে নিবন্ধন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালে তাদের কার্যক্রম শুরু করে । যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া চালু করে এফডিআর ,ডিপিএস সহ বিভিন্ন স্কিম । বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদেও কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে ।
আল-আমিন মার্কেটের মালিক হাফিজুর রহমান জানান ,বার্ষিক ১২-১৪ শতাংশ হারে মুনাফা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সমিতি । এ কারণেই গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে । চেয়ারম্যান খন্দকার আবুল কালাম আজাদ ১০ বছরের জন্য তার কাছ থেকে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন । গত ৮ বছর তিনি কোনো ভাড়া নেননি । এর পরিবর্তে ভাড়া বাবদ প্রাপ্য টাকা তিনি সমিতিতে গচ্ছিত রাখেন । এখন সমিতিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘর ভাড়া বাবদ ৬ লাখ ও ডিপিএসের প্রায় ৩ লাখসহ প্রায় ৯ লাখ টাকা ফিরে পাওয়ার কোনো আশা নেই তার । এ নিয়ে হাফিজুর রহমান মাগুরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে পুলিশ জানায় । জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতির কার্যলয়ের নিচ তলায় রয়েছে এসএ পরিবহনের মাগুরা শাখার অফিস । এখানে কাজ করেন শহরতলীর পাশ্ববতী পারনান্দুয়ালি গ্রামের নাছিমা খাতুন । তিনি জানান , শহরের বেশ কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আসায় এফডিআর ,ডিপিএস সহ বিভিন্ন স্কিমের আওতায় গচ্ছিত রেখেছিলেন তাদের সঞ্চয় । জনতা সমিতির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহরিয়ারের প্ররোচনায় তিনি নিজেও ৯ হাজার জমা রেখেছিলেন সমিতিতে ।
এ বিষয়ে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান , জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতারনার মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা আতœসাৎ করেছে শুনেছি । আমরা উক্ত প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছি । এর সাথে যারা জড়িত তাদের ধরার ব্যাপারে পুলিশ কাজ করছে । অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে ।
তিনি আরো জানান , তাদের বিষয়ে কেউ তথ্য দিলে তাৎখনাত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।