শনিবার ● ২৯ এপ্রিল ২০১৭
প্রথম পাতা » সর্বশেষ » আশাশুনির ভূমিহীন পল্লীতে সন্ত্রাসী হামলার ৫৬ দিন পর থানায় মামলা রেকর্ড গ্রেফতার-১, বশির পলাতক, ওসি তদন্ত ক্লোজড
আশাশুনির ভূমিহীন পল্লীতে সন্ত্রাসী হামলার ৫৬ দিন পর থানায় মামলা রেকর্ড গ্রেফতার-১, বশির পলাতক, ওসি তদন্ত ক্লোজড
আহসান হাবিব, আশাশুনি : আশাশুনির শোভনালীর ভূমিহীন পল্লীতে মৎস্যঘেরে লুটপাট, মারপিট ও অগ্নিসংযোগের ৫৬ দিন পর অবশেষে থানায় মামলা রেকর্ড হয়েছে। বাহিনীর সেকেন্ড ইন-কমান্ড গ্রেফতার হলেও অপকর্মের তৎপরতা কমেনি। বিলম্বে মামলা রেকর্ড করায় ওসি তদন্তকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। মামলায় লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিনে ঘুরে জানাগেছে, উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের কাটাখালী মৌজাস্থ বড় মুক্তখালী নামক স্থানে কাটাখালী গ্রামের বাবর আলী সরদারের পুত্র রফিকুল ইসলাম ৩১ বিঘা জমিতে দীর্ঘদিন হারী নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মৎস্যঘের করে আসছিল। এদিকে সরাপপুর গ্রামের সামছুর সরদারের পুত্র চাঁদাবাঁজ, লুটপাট, ভূমি লুন্ঠন ও বহু অপকর্মের হোতা বশির বাহিনীর চেকেন্ড ইন কমান্ড কাটাখালী গ্রামের র্যাবের কথিত সোর্স আমিরুল সরদার ও তার সহযোগি মহিত হাজরার নেতৃত্বে গত ২ মার্চ সকাল ৭টার দিকে প্রকাশ্য দিবলোকে উক্ত মৎস্য ঘেরে হামলা চালায়। আমিরুল ও মহিত হাজরার নেতৃত্বে ২৫০/৩০০ জন রাম দা, গেছো দা, বল্লভ, জিআই পাইপ, হাতুড়ী, লোহার রড, পেট্রোল, বোমা ও লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ঘের মালিক রফিকুল ইসলাম সহ তার কর্মচারীদের হাতপা বেঁধে মারপিট ও কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ঘেরে রক্ষিত বাক্সে প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা ও ১ মনের অধিক মৎস্য লুটপাট করে নিয়ে যায়। বীর দর্পে ঘের ত্যাগের সময় মামলা মোকদ্দমা ও কোন প্রকার পুলিশে জানালে জীবনে খতম করার হুমকি ধামকি দিয়ে চলে যায়। এব্যাপারে রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে বশির বাহিনীর প্রধান বশিরকে ১নং আসামী করে ৩২ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক আরও ২৫০/৩০০ অজ্ঞাতনামা রেখে একটি এজাহার তৎকালীন সময় থানায় জমা দিলেও অজ্ঞাত কারনে এবং বশির কর্তৃক অধিক উৎকোচের কারনে মামলা তো রেকর্ড হয়ইনি বরং রফিকুল ও তাদের মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের নামে ডজনাধিক বশিরের পক্ষীয় লোকের বাদী করে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। বিষয়টি জখন এলাকাবাসীকে হতবাক বা ভাবিয়ে তুলেছে এমনি সময় ঘটনার ৫৬ দিন পর পুলিশ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষে দৃষ্টিগোচরের কারনে অবশেষে গত ২৭ এপ্রিল বশিরকে ১নং আসামী করে ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ ২৫০/৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা রেখে ১৪৩, ৪৪৭, ৩৪২, ৩২৩ সহ ১০টি ধারা উল্লেখ করে ১৫(০৪)১৭নং মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। বিলম্বে মামলা রেকর্ড করায় অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমান থানা অফিসার ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) জুলফিকার আলীকে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। এদিকে মামলা রেকর্ড হওয়ার সাথে সাথে বশির বাহিনীর সেকেন্ড ইন-কমান্ড আমিরুল ইসলাম পুলিশের খাচায় বন্দি হয়েছে। যতদূর জানাগেছে, পুলিশ বশিরকে গ্রেফতার করতে তার বাড়ী হানা দিলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বশির পালিয়ে এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আত্মগোপন করে আছে। প্রসঙ্গতঃ ভূমিদস্যু বশির কর্তৃক দীর্ঘদিন কাটাখালী মৌজাস্থ বড় মুক্তখালী নামক প্রাপ্য সাড়ে ৩শ বিঘা খাস জমি অবৈধ দখলে রাখে। গত ১ ফেব্র“য়ারী এলাকার শতাধিক ভূমিহীন পরিবার তাদের ইজারাকৃত উক্ত অবৈধ দখলকৃত ৩৩৮ বিঘা জমি দখলমুক্ত করে ভূমিহীনরা আয়ত্বে নেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বশিরের নির্দেশে তার বাহিনী আমিরুল ও মহিত হাজরার নেতৃত্বে ভূমিহীন পল্লীতে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হামলা ও মিথ্যা মামলার দিয়ে এলাকায় ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। এরই ফলশ্র“তিতে গত ২ মার্চ সাবেক চেয়ারম্যান জালাল গাজীর পুত্র ভূমিহীনদের সহযোগি মিলন গাজী ও কাটাখালী গ্রামের রফিকুল সরদারের মৎস্য ঘেরে প্রকাশ্য দিবালোকে সকালে লুটপাট, মারপিট ও অগ্নি সংযোগ করে। এ ঘটনার প্রায় ২ সপ্তাহ পরে ভূমিহীন বাকড়া গ্রামের মোস্তফা ওরফে মোস্তর বসতবাড়ী অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করে উল্টো মোস্ত সহ একাধিক ভূমিহীনের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে বশির বাহিনী। পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে আমিরুলকে গ্রেফতার ও বশিরকে গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর হয়ে উঠলে এলাকায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে এসেছে।