শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১

SW News24
বৃহস্পতিবার ● ২৫ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » জাদুঘর আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » জাদুঘর আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৯৯৯ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ২৫ মে ২০১৭
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

জাদুঘর আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান

জাদুঘর আমাদের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের এক নমুনা সংগ্রহশালা। দেশের ঐতিহাসিক প্রতাত্ত্বিক, নৃ-তাত্ত্বিক, ভূতাত্ত্বিক শিল্পকলা, প্রাকৃতিক ও প্রাণীবিষায়ক নমুনা সংগ্রহ, সংরক্ষন প্রদর্শন ও গবেষণার উদ্দেশ্য জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮ মে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস। ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়াম (আইকম) ১৯৭৭ সালে মস্কোয় অনুষ্ঠিত ১২তম সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিবছর ১৮ মে বিশ্ব জাদুঘর দিবস পালিত হবে। সেই থেকে প্রতিবছর ১৮ মে  দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।  বিশ্বের অন্যদেশের মতো বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।

বিশ্বের প্রথম জাদুঘর স্থাপিত হয় কায়রো-মিশরে। দ্বিতীয় শতাদ্বীতে মিশরে টলেমি শাসনামলে আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। এশিয়া মহাদেশে জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৮৪ সালের ১৫ জানুয়ারী এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। ব্রিটিশদের মাধ্যমে উপমহাদেশে জাদুঘরের ধারণা তৈরি হয়। ভারতীয় এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যগন জাদুঘর প্রসারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এশিয়াটিক সোসাইটি পৃষ্ঠপোষক লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস কলকাতার পার্কস্ট্রিটে জাদুঘর নির্মাণের জন্য জমির ব্যবস্থা করে দেন এবং ১৮০৮ সালে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়। উপমহাদেশের প্রথম জাদুঘর ‘এশিয়াটিক সোসাইটিক মিউজিয়াম’ ১৮১৪ সালে প্রতিষ্ঠি হয়।

১৮৫৬ সালের ১ নভেম্বর ‘দি ঢাকা নিউজ’ পত্রিকায় প্রথম ঢাকায় একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তবে ১৯ শতকে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ অপ্রত্যাশিত ভাবে ঢাকায় জাদুঘর প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি করে। তবে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রহিত হওয়ায় সরকারি উদ্যোগে জাদুঘর স্থাপনের প্রচেষ্টা থেমে যায়। কিন্তু ঢাকার বিশিষ্ট নাগরিকগণ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার জন্য সোচ্চার হন। ১৯১২ সালের ২৫ জুলাই বাংলার তৎকালীন গভর্ণর লর্ড কারমাইকেল ঢাকায় আগমন উপলক্ষে নর্থব্র“ক হলে তাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নাগরিকগণ ঢাকায় একটি জাদুঘর স্থাপনের দাবীর পরিপেক্ষিতে তিনি ২ হাজার রুপি মঞ্জুর করেন। ১৯১৩ সালের ৫ মার্চ জাদুঘর স্থাপনের সরকারি অনুমোদনের গেজেট প্রকাশিত হয়। ১৯১৩ সালের ২০ মার্চ তৎকালীন সচিবলয়ে (বর্তমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) একটি কক্ষে জাদুঘরের নিদর্শন সংরক্ষণের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯১৩ সালের ৭ আগস্ট লর্ড কারমাইকেল ঢাকা জাদুঘরের আনুষ্ঠিক উদ্বোধন করেন। ১৯১৪ সালের ৬ জুলাই নলিনীকান্ত ভট্টশালীকে জাদুঘরের কিউরেটর নিযুক্ত করা হয়। ১৯১৪ সালের ২৫ আগস্ট সর্বসাধারণের জন্য জাদুঘর খুলে দেওয়া হয়। জাদুঘরের নিদর্শন সংখ্যা ক্রমই বাড়তে থাকলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ১৯১৫ সালের জুলাই মাসে ঢাকার নায়েব নাজিমদের বারোদুয়ারি ভবন নিমতলীতে জাদুঘরটি সরিয়ে নেয়া হয়। ১৯৮৩ সালের ১৭ নভেম্বর শাহবাগ জাদুঘরের নিজস্ব আধুনিক ভবনে স্থানান্তরিত করা হয়। শাহাবাগে ৮.৬৩ একর জমির উপর একটি চারতলা আধুনিক ভবনে বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর অবস্থিত। এ জাদুঘরে ৪৪টি প্রদর্শনী কক্ষ, ৩টি অডিটোরিয়াম, ১টি গ্রন্থাগার ও ২টি অস্থায়ী প্রদর্শনী কক্ষ রয়েছে। জাদুঘরে সংগৃহীত নিদর্শন রয়েছে ৮৫ হাজারের বেশী।

বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর ‘বরেন্দ্র জাদুঘর’ ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বরেন্দ্র জাদুঘরে প্রায় ৯ হাজার পূরাকীর্তি রয়েছে। রাজধানী ঢাকা শহর, বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও উপজেলায় জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে জাদুঘরের সংখ্যা শতাধিক। আমাদের দেশেও বিভিন্ন ক্যাটাগরির জাদুঘর রয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর (ঢাকা), মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর (ঢাকা), বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর (ঢাকা), স্বাধীনতা জাদুঘর (ঢাকা), আহসান মঞ্জিল জাদুঘর (ঢাকা), বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা জাদুঘর (ঢাকা), সামরিক জাদুঘর (ঢাকা), প্রাণী জাদুঘর (ঢাকা) দিয়াশলাই জাদুঘর (ঢাকা), বরেন্দ্র জাদুঘর (রাজশাহী), জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘর (চট্টগ্রাম), পানি জাদুঘর (কুয়াকাটা), পাথর জাদুঘর (পঞ্চগড়), নৌকা জাদুঘর (লৌহজং), পাইকগাছা জাদুঘর (পাইকগাছা)। ভিন্ন ভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণে জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হলেও এসব জাদুঘরের লক্ষ অভিন্ন।

অতিত ও বর্তমানের সেতুবন্ধন হচ্ছে জাদুঘর। জাদুঘর দেশের গৌরবময় ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে। নিদর্শন ভিত্তিক গবেষনা ও শিক্ষা বিস্তারের জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি দেশের হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতার সঙ্গে সেই দেশের পরিচয় তুলে ধরে জাদুঘর। দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানার জন্য জাদুঘর পরিদর্শন করতে হবে। বাংলাদেশ একটি সু-প্রাচীন সভ্যতার দেশ। আমাদের রয়েছে গৌরবদ্বীপ্ত ইতিহাস। পর্যটকরা জাদুঘর পরিদর্শনে আকৃষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার দর্শনার্থী বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শন করছেন। দেশের পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

লেখকঃ সাংবাদিক





ইতিহাস ও ঐতিহ্য এর আরও খবর

পাইকগাছার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প মৃতপ্রায় ; প্রয়োজন সরকারি পৃষ্টপোষকতা পাইকগাছার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প মৃতপ্রায় ; প্রয়োজন সরকারি পৃষ্টপোষকতা
হারিয়ে যাচ্ছে কবি কাজী কাদের নওয়াজের শেষ স্মৃতি চিহ্ন হারিয়ে যাচ্ছে কবি কাজী কাদের নওয়াজের শেষ স্মৃতি চিহ্ন
চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের জন্মশতবর্ষ পালিত চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের জন্মশতবর্ষ পালিত
চুকনগর বদ্ধভূমি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে : গণপূর্তমন্ত্রী চুকনগর বদ্ধভূমি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে : গণপূর্তমন্ত্রী
ঔপন্যাসিক নীহার রঞ্জন গুপ্তের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী পালিত ঔপন্যাসিক নীহার রঞ্জন গুপ্তের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী পালিত
জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক নীহার রঞ্জন গুপ্তের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী ; নীহার রঞ্জন গুপ্তের বাড়ি সংরক্ষণে ৫ দফা দাবি জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক নীহার রঞ্জন গুপ্তের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী ; নীহার রঞ্জন গুপ্তের বাড়ি সংরক্ষণে ৫ দফা দাবি
খুলনায় গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবাষির্কীতে আলোচনা সভা সঠিক ইতিহাস যেন বিকৃত না হয়  -খুলনায় সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী খুলনায় গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবাষির্কীতে আলোচনা সভা সঠিক ইতিহাস যেন বিকৃত না হয় -খুলনায় সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন
বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ এম এ গফুর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ এম এ গফুর
মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক পাইকগাছার মধুমিতা পার্কটির অবৈধ স্হাপনা উচ্ছেদ করে পূর্বাস্হায় ফেরানোর নির্দেশ মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক পাইকগাছার মধুমিতা পার্কটির অবৈধ স্হাপনা উচ্ছেদ করে পূর্বাস্হায় ফেরানোর নির্দেশ

আর্কাইভ