বুধবার ● ১১ অক্টোবর ২০১৭
প্রথম পাতা » নারী ও শিশু » পূর্ণিমার চোখে আনন্দ অশ্রু
পূর্ণিমার চোখে আনন্দ অশ্রু
এস ডব্লিউ নিউজ ॥
পূর্ণিমা মানেই এক অসহায় নারী। পূর্ণিমা মানেই এক হতভাগী মহিলা। পূর্ণিমা মানেই এক নির্যাতিতা গৃহবধূ। পূর্ণিমা মানেই আলো ঝলমল জোছনার পাশে আমাবশ্যার ঘোর অন্ধকার। পূর্ণিমা মানেই ৫০ বছরের নির্মম এক ইতিহাস। পূর্ণিমা মানেই দেবতা সমতুল্য ভাই ওসি আমিনুল এর এক বোন। পূর্ণিমা মানেই ‘জাত ও ধর্মের মিল নেই তবু ও পূর্ণিমা আমার বোন’ শিরোনামে এক সংগ্রামী গল্প, এক জীবন কাহিনী। যে গল্পে নেই কোন নায়ক কিংবা নায়িকার চরিত্র। আছে খলনায়ক ও ভিকটিম এবং দেবতা সমতুল্য এক ভাইয়ের চরিত্র। পুরা গল্প জুড়েই রয়েছে ভিকটিম পূর্ণিমার লাঞ্ছনা, বঞ্চনা ও নির্যাতনের এক দীর্ঘ নির্মম কাহিনী। পূর্ণিমার অসহায় জীবনের গল্প শুনলে যে কোন মানুষের গা শিউরে উঠবে। হতভাগীনি পূর্ণিমা পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়নের উলুডাঙ্গা গ্রামের ঋষি পল্লির পরিতোষ দাশের স্ত্রী। এক সময় পূর্ণিমার অনেক কিছু থাকলে ও আজ তার মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকু ও নেই। পূর্ণিমার জীবনের শুরুটাই ছিল দুঃখের এবং কষ্টের। বিয়ের আগে থেকেই স্বামী পরিতোষ শয্যাশায়ী এক রোগী। অনেক আগেই রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় পিতা, ভাই ও একমাত্র পুত্র সন্তানের। আপন সবাই কে হারিয়ে একাকী হয়ে যায় পূর্ণিমা। অসহাত্বের সুযোগ নিয়ে তার সকল সম্পত্তি গ্রাস করতে মরিয়া হয়ে যায় এলাকার প্রভাবশালী খলনায়করা। প্রভাবশালীদের কাছ থেকে ঔষধ কেনার জন্য মাত্র দুইশত টাকা নিতে গিয়ে বিনিময়ে প্রভাবশালীদের পূর্ণিমা কে দিতে হয়েছে চার বিঘা জমি। এভাবেই এলাকার খলনায় করা হাতিয়ে নেন পূর্ণিমার সকল সহায় সম্পত্তি। পূর্ণিমার মাথা গোঁজার জন্য ও এক শতক জায়গা রাখেননি তারা। হঠাৎ দুর্বিষহ জীবনের মাঝে পূর্ণিমার সামনে এসে হাজির হন দেবতা সমতুল্য ভাই আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। আমিনুল পেশায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা। ২০০৮ সালের দিকে তিনি পাইকগাছা থানার সেকেন্ড অফিসার হিসাবে কর্মরত থাকা অবস্থায় অসহায় পূর্ণিমার সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য ভাইয়ের ভূমিকায় অবতীর্ন হন। দেবতার মতো ভাইকে কাছে পেয়ে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে অসহায় পূর্ণিমা। কিন্তু আমিনুল বদলি হলে বেঁচে থাকার সব স্বপ্ন দুঃসপ্নে পরিণত হয় পূর্ণিমার। ২০১৭ সালের ৭ মে ওসি হিসাবে আবারও পাইকগাছা থানায় যোগদান করেন পূর্ণিমার ভাই আমিনুল ইসলাম। যোগদান করতে এসেই আগে ছুটে যান পূর্ণিমার খোঁজে। যোগদানের পর শুরু করেন প্রভাবশালীদের দখলে থাকা সম্পত্তি উদ্ধারের অভিযান। এ অভিযানে অনেক প্রভাবশালী, রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধিদের রোষানলে পড়তে হয় ওসি আমিনুলকে। পান অনেক লোভনীয় অফার। সবকিছুর উর্দ্ধে থেকে সম্পত্তি উদ্ধারের ব্যাপারে অটল থাকেন ওসি আমিনুল। সরেজমিন পরিদর্শন ও দীর্ঘ আলোচনান্তে বুধবার সকালে প্রতিপক্ষ সহ পূর্ণিমাকে হাজির করেন নিজ কার্যালয়ে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে সমঝোতার আলোকে প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী মহলটি পূর্ণিমার বসবাসের জন্য তার সম্পত্তি তাকে ফিরিয়ে দিতে রাজি হন। উক্ত সম্পত্তি আগামী বুধবার রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার মাধ্যমে পূর্ণিমার নিকট হস্তান্তর করে দিবেন প্রতিপক্ষরা। ওসি’র শান্তিপূর্ণ সমাধানের সাথে একমত পোষণ করেন উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। দীর্ঘদিনপর সম্পত্তি ফিরে পাওয়ায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পূর্ণিমা। এরআগেও পূর্ণিমা থানায় এসেছে একাধিকবার। তখনও তিনি কেঁদেছেন, কিন্তু তখনকার কান্না আর এখনকার কান্নার মধ্যে পার্থক্য ছিল অনেক। তখনকার কান্নার মধ্যে ছিল দুঃখ-কষ্ট ও নির্যাতনের প্রতিচ্ছবি। আর সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার কান্নার মধ্যে ছিল ভাই ওসি’র জন্য বুকভরা ভালবাসার আনন্দ অশ্রু।