শনিবার ● ১১ নভেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » সারাদেশ » উপকূলবাসীর বেদনা-বিধুর কান্না ঝরানো দিন
উপকূলবাসীর বেদনা-বিধুর কান্না ঝরানো দিন
এস ডব্লিউ নিউজ \
আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের এই দিনে সমগ্র উপকূল জুড়ে মহাপ্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াস বয়ে যায়। প্রলয়ঙ্কারী সেই ঝূর্ণিঝড়ে প্রায় ১০ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করেছিল। অনেক পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আবার অনেক পরিবার তাদের আত্মীয়-স্বজন, মা-বাবা, ভাই-বোন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে ছিল। ৪৭ বছর আগের ঝূর্ণিঝড়ের সেই বেদনাবিধুর ইতিহাস বাঙালী জাতি আজও ভুলতে পারেনি। ১২ নভেম্বর যখন প্রতিবছর আমাদের জীবনে ফিরে আসে, তখন সেই দিনের বেদনাবিধুর স্মৃতি গভীর ভাবে নাড়া দেয়।
১৯৭০ এর ১২ নভেম্বর সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। বিকালের দিকে বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যায়। রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তর ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত প্রচার করে। বলা হয়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিæচাপটি হারিকেনের রূপ নিয়েছে এবং যার প্রভাবে উপকূল এলাকায় ২০-২৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছাসের আশংকা রয়েছে। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও এই শতর্কবানী মানুষের কানে পৌছায়নি। গভীর রাতে হঠাৎ মানুষের আত্মচিৎকারে সবাই জেগে ওঠে। প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ে মুহূর্তের মধ্যে উপকূল এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। গাছ-পালা, ঘড়বাড়ী ভেঙ্গে ও পানিতে তলিয়ে ধ্বংস স্তপে পরিণত হয়। উপকূল অঞ্চলের বহু এলাকা বিরাণ জনপদে পরিণত হয়। সেই ভয়াল কালো রাতে উপকূলীয় হাতিয়া, রামগতি, চর আব্দুলাহ, স›দ্বীপ, ঢালচর, চর জব্বার, তজুমুদ্দিন, চর কচ্ছপিয়া, চর পাতিলা, কুকরী কুমড়ী, মনপুরা, চরফ্যাশন, দৌলতখাঁন, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছাসে ভাসে। তবে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট এলাকায় প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ে এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে গেলেও প্রাণহানির সংখ্যা ছিল কম। মহাপ্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসে কোটি কোটি টাকার সম্পদ সহ বাড়িঘর, পশু-পাখি, ফসলের ক্ষেত, স্কুল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যায়।
১২ নভেম্বর বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান) উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যায় সব চেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টির নাম ছিল ‘সাইক্লোন ভোলা’। এই ঘূর্ণিঝড় লন্ডভন্ড করে দেয় উপকূল। ৮ই নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্ট হয়। ক্রমশ শক্তিশালী হতে হতে এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১১ নভেম্বর এটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৮৫ কিলোমিটারে পৌঁছায়। ১২ নভেম্বর রাতে উপকূলে আঘাত হানে। জলোচ্ছ¡াসের কারণে উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপসমূহ প্লাবিত হয়। ১০ নং মহাবিপদ সংকেতের বার্তা মানুষের কাছে ঠিকমত না পৌছানোর কারণে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। ওই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় পাঁচ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটে। বেসরকারী হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ লাখের উপরে ছিল।
পাইকগাছা উপজেলার মঠবাটী গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী মনিন্দ্রনাথ দেবনাথ (৮০) জানান, ১২ নভেম্বর ভোর থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হতে থাকে। রাতে একটু গভীর হলে প্রলয়ঙ্করী ঝড়ে মুহূর্তের মধ্যে এলাকার গাছ-পালা ও কাঁচা ঘর-বাড়ী ভেঙ্গে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। মানুষজন আশ্রয় নেওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। এলাকার হাতেগোনা কয়েকটি পাঁকা বিল্ডিং বাড়ীতে আশ্রয় গ্রহণ করে। এ সময় এলাকায় প্রচুর গাছ-পালা ছিল, গাছ উপড়ে ও ভেঙ্গে পুরো এলাকা তচনছ হয়ে যায়। প্রায় ১৫ দিন ধরে গাছ-পালা কেটে রাস্তা পরিস্কার করতে হয়ে ছিল। তবে আমাদের এলাকায় কোন লোকের প্রাণহানি না হলেও গড়ইখালী, চাঁদখালী এলাকায় জলোচ্ছ¡াসে ঘর-বাড়ী ভেসে যায়। ঝড়ো হাওয়া ও স্রোতে ভেসে যেয়ে কয়েকজন ব্যক্তির প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তিনি আরো জানান, সে দিনের সেই ঘটনা মনে হলে এখনো গায়ের লোম শিউরে ওঠে। ভেবে ছিলাম আমরা কেউ বাঁচবো না। সববুঝি শেষ হয়ে গেল। এত বছর পরেও স্বল্প পরিসরে হলেও ওই দিবসটি পালিত হয়। দিনটিকে স্মরণ করে গণমাধ্যমসমূহ। এবার প্রথম বারের মত উপকূলের ১৫ জেলার ৩২ উপজেলার ৩৪ স্থানে উপকূল দিবস পালিত হচ্ছে।