সোমবার ● ১ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » যশোরে বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী> দেশকে এগিয়ে নিতে নৌকায় ভোট দিন
যশোরে বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী> দেশকে এগিয়ে নিতে নৌকায় ভোট দিন
এস ডব্লিউ নিউজ।
রবিবার যশোর শহর ছিল মিছিল আর স্লোগানের নগরী। শহরের মুজিব সড়ক, জেল রোড, ঘোপ সেন্ট্রাল রোড, শহীদ মসিয়ুর রহমান সড়ক, আর এন রোড, নীলরতন ধর রোড, স্টেডিয়াম রোড ধরে জনতা আসছিলেন। সমস্ত মিছিলের গন্তব্য ছিল যশোর ঈদগাহ ময়দান। শত শত লোকের মিছিল হয়ে যায় হাজার হাজার। সবার মুখে সেøাগান ‘নেত্রী তুমি এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে’। পৌষের নরম রোদে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যখন বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে যশোর ঈদগাহ ময়দানে এসে পৌঁছান তখন ময়দান ছাপিয়ে জনতা দাঁড়িয়ে গেছে মুজিব সড়ক, দড়াটানা মোড়, নেতাজী সুভাষ রোড, জেলা স্কুল মোড়সহ জনসভা স্থলের আশপাশের সড়কে। জনসভাস্থলের আশপাশে তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য যশোর শহরের আরবপুর মোড় থেকে শহীদ মসিয়ুর রহমান সড়ক হয়ে ঈদগাহ ময়দান পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা হাত নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
রবিবার যশোর শহরটাই ছিল অন্যরকম নগরী। আর প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে যশোরকে সাজানো হয়েছিল অন্য রকম। পোস্টার-ব্যানার এবং ফেস্টুনে ছেয়ে গিয়েছিল গোটা শহরের সড়কগুলো। নির্মাণ করা হয়েছিল কয়েক হাজার তোরণ। এসব তোরণ করা হয়েছে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে। শুধু যশোর শহর নয়, ব্যানার-ফেস্টুন ও তোরণ দিয়ে সাজানো হয়েছিল জেলার ৮ উপজেলা।
জনসভা মঞ্চে পৌঁছেই যশোরের উন্নয়নে ১৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১২টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তৃতায় এ প্রকল্পগুলোর কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বিগত নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার বিকেলে যশোরের ঈদগাহ ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এ আহ্বান জানান। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম মিলন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে যারা নৌকায় ভোট দিয়েছেন, তাদের প্রতি আহ্বান, আবারও আমাদের নৌকায় ভোট দেবেন, সেটাই আপনাদের কাছে আমি চাই। নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে সেবা করার সুযোগ দেবেন। এসময় জনসভায় অংশ নেয়া জনতাকে হাত তুলে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার সাড়া দিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। জবাবে জনতাও একযোগে হাত তুলে সাড়া দেন আওয়ামী লীগ সভাপতিকে।
জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই ছেলে দেশের মানুষের টাকা মেরে বিদেশে পাচার করেছে। এটা বিদেশী সংস্থার লোক এসে সাক্ষী দিয়ে যায়। তাদের মা-ও কম যান না। এতিমের টাকা মেরে খান।
তিনি বলেন, ‘জাতির জনককে হত্যার পর এ দেশ পরিণত হয়েছিল হত্যা, ক্যু, কারফিউর দেশ। লুটপাটের রাজত্বে কায়েম করা হয়েছিল এ দেশে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা কারফিউ জারি করে দেশ চালাতো। জিয়া কারফিউ দিয়ে ভীতিকর পরিবেশে দেশ চালাতেন। জিয়ার গণতন্ত্র ছিল যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে। যে যুদ্ধাপরাধীরা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, এ দেশের মা-বোনদের সম্ভ্রমহানি করেছে, পাকিস্তানী হানাদারদের হাতে তুলে দিয়েছে, নৃশংসভাবে গণহত্যা চালিয়েছে, সেই যুদ্ধাপরাধীদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করে পুরস্কৃত করাটা ছিল জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্র।’
বিএনপি জোটের কারবারই হচ্ছে খুন সন্ত্রাস বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেই দেশে শান্তি ফিরে আসে, দেশের উন্নয়ন হয়। তিনি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। প্রতিটি ইউনিয়নে ই-সেবা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। সেখানে মানুষ সেবা পাচ্ছে।
এসময় তিনি তার সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে বিএনপি সরকারের শাসনামলের সমালোচনা করে বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের মানুষের ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। দেশের উন্নয়ন হয়। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খুন, গুম জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বাংলা ভাইয়ের রাজত্ব জয়ী হয়। আমরা উন্নয়ন চাই। বাংলাদেশ হবে সুখী সমৃদ্ধ উন্নত দেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা। কিন্তু ঘাতকরা সেই স্বপ্ন পূরণ করতে দেয়নি। পঁচাত্তর পরবর্তীতে জিয়া ক্ষমতা দখল করে। জিয়ার গণতন্ত্র ছিল যুদ্ধাপরাধীরে পুর্নবাসন আর প্রতি রাতে কারফিউ জারি করে দেশ শাসন। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে সারাদেশে জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দেয়। ৬৩ জেলার ৫০০ স্থানে একসঙ্গে জঙ্গি হামলা হয়। তিনি বলেন, জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্র ছিল যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠা করা। যুদ্ধাপরাধীর দায়ে যাদের ফাঁসি হয়েছে সেই জামায়াত নেতা আলবদরদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তাদের হাতে দেশের পতাকা তুলে দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে দেশ পরিচালনা করি। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হবে। দেশ দারিদ্র্যমুক্ত হবে। এদেশে আর দারিদ্র্য থাকবে না। তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্যসেবা আজ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। ১৮০০০ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করেছি। ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেন। আমরা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আবার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছি।
জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্যসহ নেতৃবৃন্দ। সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। জনসভায় কয়েকজন মন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন যশোর ছাড়াও খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া জেলার বেশ কয়েকজন এমপি।
যশোরে প্রধানমন্ত্রী ঈদগাহ ময়দান থেকে দেড় ডজন উন্নয়ন কর্মকান্ডের উদ্বোধন করেন। এগুলো হলো কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়), তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ‘নির্বাচিত বেসরকারী কলেজগুলোর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলার আমদাবাদ কলেজ, শার্শা উপজেলার পাকশিয়া আইডিয়াল কলেজ ও বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজে নির্মিত দোতলা ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার সম্প্রসারণ কাজ, মনিরামপুর উপজেলায় ৫০০ আসনের শহীদ মশিয়ুর রহমান অডিটোরিয়াম-কাম মাল্টি পারপাস হল নির্মাণ, যশোর পাবলিক লাইব্রেরির উন্নয়ন প্রকল্প; যশোর মেডিক্যাল কলেজের এ্যাকাডেমিক ভবন, হৈবতপুর, নরেন্দ্রপুর, মহাকাল ও পাতিবিলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন, যশোরের পুলিশ সুপার ভবন ও পুলিশ হাসপাতাল, শেখ রাসেল ভাস্কর্য, শহরের ১৩ কিলোমিটার সড়ক ও ২২ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ কাজ, ঝিকরগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন এবং অভয়নগরের মালোপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে মালোপাড়ায় মালো সম্প্রদায়ের উপর হামলা হলে সেখানে তাদের দেখতে আসেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সেখানে মালোপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ডজন খানেক কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। এর মধ্যে রয়েছে ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’র অধীনে ভৈরব নদ খনন, যশোর-বেনাপোল ও যশোর-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের যশোর অংশ (পালবাড়ী হতে রাজঘাট অংশ) প্রশস্তকরণ প্রকল্প, কেশবপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ, যশোর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ, শহরের ২৫ কিলোমিটার সড়ক ও ২৪ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ কাজ, ঝুমঝুমপুর কম্পোস্ট প্ল্যান্ট, প্রি-ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট এবং কন্ট্রোল ল্যান্ডফিল সেল নির্মাণ, ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবন ও হলরুম নির্মাণ, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের ম্যুরাল স্থাপন এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ রাসেল জিমনেসিয়াম ভবন ও ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রর (টিএসসি) ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।