রবিবার ● ২১ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » স্বাস্থ্যকথা » পাইকগাছায় ৩ লাখ গ্রামীন জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক
পাইকগাছায় ৩ লাখ গ্রামীন জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক
এস ডব্লিউ নিউজ ॥
পাইকগাছায় প্রায় ৩ লাখ গ্রামীন জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক। ক্লিনিকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হলেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি ক্লিনিকে কর্মরত গরীবের ডাক্তার খ্যাত কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডারদের। যোগদানের পর হতে একই বেতন-ভাতা উত্তোলন করছে তারা। গত ৭ বছরেও চাকুরি জাতীয়করণ না হওয়ায় যেমন বাড়েনি বেতন-ভাতা তেমনি সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে তারা। ইতোমধ্যে কয়েক দফা উদ্যোগ নেয়া হলেও চিঠি চালাচালির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে জাতীয়করণের বিষয়টি। শেষমেষ জাতীয়করণের দাবীতে সংশ্লিষ্ট হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডাররা পালন করছেন অবস্থান কর্মসূচী। রোববারও দ্বিতীয় দিনের মত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে উপজেলা সিএইচসিপি এসোসিয়েশন। এতে গত দু’দিন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম।
সূত্রমতে, মানুষের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা, মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে বর্তমান সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেন। অবকাঠামোগত কাজ সম্পন্ন হওয়ারপর ২০০১ সাল পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে স্থবির হয়ে পড়ে এর সকল কার্যক্রম। ২০০৮ সালে আবারও ক্ষমতায় এসে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার বন্ধ থাকা কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু করেন। ক্লিনিক গুলো স্বচল রাখা ও সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১১ সালে প্রত্যেক কমিউনিটি ক্লিনিকের বিপরিতে নিয়োগ দেয়া হয় একজন করে হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার। এর মাধ্যমে পুরাপুরি চালু হয় কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম। সারাদেশের ন্যায় পাইকগাছা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে প্রস্তাবিত ৩৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকের স্থলে স্থাপন করা হয় ৩৭টি ক্লিনিক। এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলের গ্রামীন জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রায় ৩ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি কর্মরত হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডারদের। হরিঢালী ইউনিয়নের সিএইচসিপি আনতারা হুমাইদা বলেন, এমন কোন চিকিৎসা সেবা নেই যা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেওয়া হয় না। সেবা করার মাধ্যমে গত ৭ বছরে আমরা সাধারণ মানুষের কাছে গরীবের ডাক্তার হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে আমরা এখনো বঞ্চিত রয়েছি। যোগদানের পর হতে এ পর্যন্তএকই বেতন-ভাতা উত্তোলন করছি। তাও আবার সময়মত পায়না। অনেক সময় ৬ মাস পর পর বেতন পায়। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতন জীবন যাপন করতে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাকুরি জাতীয়করণের ব্যাপারে কয়েক দফা উদ্যোগ নিলেও তা চিঠি চালাচালির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালক ডাঃ মাখদুমা নার্গিস ২৯/০৭/২০১৩ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবাদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ সিএইচসিপি দের চাকুরী রাজস্ব খাতে স্থানান্তর প্রসঙ্গে সকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবর পত্র প্রেরণ করেন। এরপর ১৯/০৯/২০১৩ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মোঃ শাহ নেওয়াজ সিএইচসিপি’দের চাকুরী স্থায়ী করণ প্রসঙ্গে সকল সিভিল সার্জন বরাবর পত্র দেন। এরপর ১৭/০৪/২০১৪ সালে ডাঃ মাখদুমা নার্গিস আবারও সিএইচসিপি’দের চাকুরী বহিঃ খোলা প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন বরাবর পত্রদেন। এরপর ২২/০৪/২০১৪ তারিখ ডাঃ মাখদুমা নার্গিস আবারও সিএইচসিপি’দের হালনাগাদ বার্ষিক/বিশেষ গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) প্রেরণ প্রসঙ্গে সকল সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও প প কর্মকর্তা বরাবর পত্রদেন। এভাবেই শুধু পত্র প্রেরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে জাতীয়করণের কার্যক্রম। বাংলাদেশ কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার এসোসিয়েশনের খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক অনুপম বিশ্বাস জানান, গর্ভবতী মায়ের সেবা, শিশু স্বাস্থ্য, স্বাভাবিক প্রসব, স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান সহ সাধারণ রোগের চিকিৎসা সেবায় সিএইচসিপি’রা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। অথচ যাদের মাধ্যমে গ্রামীন জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হচ্ছে তারাই আজ সবচেয়ে অবহেলিত। যারা কর্মরত রয়েছি তাদের অনেকের ইতোমধ্যে চাকুরীর বয়স শেষ। সরকার রাজস্ব খাত থেকে আমাদের বেতন প্রদান করলেও চাকুরী জাতীয়করণের ব্যাপারে তেমন কোন অগ্রগতি নেই। ফলে আমরা সবাই সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত রয়েছি। সুষ্ঠু স্বাস্থ্যসেবার কর্মপরিবেশ, উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার স্বার্থে এবং দেশের তৃণমূল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিরস্থায়ী রূপদানের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য বান্ধব সরকার দেশের সকল সিএইচসিপি দের চাকুরী জাতীয়করণ করার মাধ্যমে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।