বৃহস্পতিবার ● ২৫ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » অপরাধ » মাগুরায় অবৈধ ভাবে চাল সংগ্রহের বরাদ্দ চেয়ে জেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকি ॥ ২ জন আটক
মাগুরায় অবৈধ ভাবে চাল সংগ্রহের বরাদ্দ চেয়ে জেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকি ॥ ২ জন আটক
মাগুরা প্রতিনিধি ॥ অবৈধ ভাবে সরকারি চাল সংগ্রহ অভিযানের বরাদ্দ নিতে জেলা খাদ্য কর্মকর্তার উপর চড়াও হয়েছে স্থানীয় একটি ধান চাল মিল মালিক গ্রুপ। বুধবার দুপুরে তারা জোরপূর্বক বরাদ্দ নিতে জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যলয়ে যেয়ে গালিগালাজ করে টেলিফোন ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করে প্রাণনাশের হুমকী দেয়। বিষয়টি মাগুরা জেলা প্রশাসকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য কর্মকর্তা। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্তদের মধ্যে ২জনকে আটক করে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করলে তাদের জেল হাজতে প্রেরন করে।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম জানান, গত বোরো মৌসুমে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ধানের খুচরা বাজারদর বেশি থাকায় ৪ উপজেলার বেশিরভাগ মিল মালিক খাদ্য অফিসে নাম তালিকাভুক্ত করেনি। পরবর্তীতে জেলা সদরে মঙ্গল বিশ্বাসসহ ৭ জন, মহম্মদপুরে দুইজন মিলার তালিকাভুক্ত হয়। এ সময় জেলায় গত ডিসেম্বরে আসা ২০১ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের বরাদ্দ তাদেরকে দেওয়া হয়।
চলতি আমন মৌসুমে আরো ৫০০ মেট্রিক টন চালের অতিরিক্ত সংগ্রহরে জন্য নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নিয়মনুযায়ী এই বরাদ্দ তালিকাভুক্ত ওই ৯ জনের মধ্যে বণ্টন হবার কথা। কিন্তু জেলার প্রধান মিল ‘মাগুরা অটো রাইস মিলে’র মালিক সরোয়ার হোসেন বাচ্চুসহ অনেকে এটি মানতে নারাজ। যার অন্যতম কারণ বর্তমানে সরকার নির্ধারিত চালের বাজার মূল্য বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি। এ কারণে তারা তালিকা ভুক্ত না হয়েই জোরপূর্বক বরাদ্দ নিতে জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যলয়ে যায়। এ সময় তারা খাদ্য কর্মকর্তা রেজাউল ইসলামের কাছে গিয়ে বরাদ্দ বিষয়ে জানতে চায়। খাদ্য কর্মকর্তা এটি ডিসি অফিসে জেলা কমিটির সিদ্ধান্তে চুড়ান্ত হবে জানালে উপস্থিত বাচ্চুসহ অনেকে তাকে গালিগালাজ করে। পাশাপাশি টেলিফোন ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করে।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক আতিকুর রহমানের লিখিত অভিযোগে রেজাউল ইসলাম জানিয়েছে সরোয়ার হোসেন বাচ্চু প্রাণনাশের হুমকি দেওয়াসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। এছাড়া বাচ্চু বলেন,‘‘তোর ডিসি টিসি বুঝিনে, আমি যা বলবো তুই তাই করবি। না হলে ৭ দিনের মধ্যে চেয়ার ছাড়বি’’।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক আতিকুর রহমান বলেন, খাদ্য কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এটি দু:খজনক। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে এটি অবহিত করা হয়েছে’’।
এদিকে, সরোয়ার হোসেনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেছে নানা তথ্য। মাত্র এক দশক আগেও সেছিল এক জন সাধারণ মিল মালিক। কিন্তু গত ২০১৫ সাল থেকে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে সে। সরকারি ভাবে ধান চাল সংগ্রহের যে বরাদ্দ আসে তা ঘিরে তার মূল সিন্ডিকেট। সরকারি দলের এমপিসহ বিভিন্ন নেতাকে দিয়ে সে হাজার হাজার টন চাল ও ধানের বরাদ্দ নেয়। টন প্রতি নেতাদেরকে ২ হাজার টাকা করে ঘুষ দিয়ে সে বরাদ্দ পায়। পরবর্তীতে ইচ্ছে মত ধান চাল সংগ্রহ করে কোটি টাকার সম্পদের অধিকারী হয় সে। পৌর এলাকার সাজিয়াড়ায় বর্তমানে তার কয়েক কোটি টাকার মূল্যের একটি আটো রাইস মিলসহ একধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন।
অভিযুক্তদের মধ্যে বুধবার রাতে মঙ্গল ও রুহোল আমিন নামে দুইজনকে আটক করে। তাদেরকে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠালে জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠান।
এ বিষয়ে, সরোয়ার হোসেন বাচ্চু এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে সব কিছু মিথ্যা ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন।