বৃহস্পতিবার ● ২৬ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » সুন্দরবনে মধু আহরণের মৌসুম শুরু হয়েছে; মধু উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে
সুন্দরবনে মধু আহরণের মৌসুম শুরু হয়েছে; মধু উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে
প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছা ॥
বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের মধু উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। বৈরী পরিবেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মৌমাছির বংশ বিস্তার ব্যাহত হওয়ায় বনে মধুর পরিমাণ দিনে দিনে কমছে। তবে এখনও সনাতন পদ্ধতিতে মধু আহরণ করায় মৌমাছি আগুনে পুড়ে ধ্বংস হচ্ছে ও মধুর পরিমাণ কমছে; ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বন। মশাল দিয়ে ধোয়া দেখার সময় অনেক মৌমাছি আগুনে পুড়ে মারা যায়। আবার অনেক সময় না বুঝে পুরোমৌচাক কেঁটে ফেলেন মৌয়ালরা। এসব কারণে সুরন্দবনের মধু সম্পদ হুমকির মুখে পড়েছে।
সুন্দরবনে মধু ও মোম আহরণের মৌসুম শুরু হয়েছে। এ নিয়ে উপকূল এলাকায় মৌয়ালদের মধ্যে ব্যাপক তৎপরতা দেখা দিয়েছে। এপ্রিল থেকে ১৫জন পর্যন্ত বনে মধু আহরণ চলবে। প্রায় আড়াই মাস ব্যাপী মৌয়ালরা সুন্দরবনে মধু আহরণ করবে। বন বিভাগ সুত্রে জানাগেছে, মৌয়ালরা বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট (বিএলসি) এবং পাস পারমিট নিয়ে বনে প্রবেশ করছে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ থেকে জানাগেছে, এ বছর পশ্চিম বন বিভাগে মধু আহরণ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭শ ৫০ কুইন্টাল ও মোম ৪৪০ কুইন্টাল। এরমধ্যে খুলনা রেঞ্জে ৭শ কুইন্টাল ও মোম ১৭৫ কুইন্টাল এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জে ১ হাজার ৫০ কুইন্টাল মধু ও মোম ২৬৫ কুইন্টাল আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। প্রতি কুইন্টাল মধু আহরণের জন্য ৭৫০ টাকা এবং মোমের জন্য ১ হাজার টাকা রাজস্ব দিতে হবে বন বিভাগকে। সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য মোয়ালদের মাথাপিছু ৮ টাকা রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। সুন্দরবন থেকে সুন্দরী, খলিসা, গরাণ, গেওয়া, বাইন ও কেওড়া গাছের মধু আহরণ করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বনের জীববৈচিত্রের উপর প্রভাব পড়েছে। এর পাশাপাশি এখনো সনাতন পদ্ধতিতে মধু আহরণ করায় মধুর পরিমাণ কমছে।
মৌয়ালদের কাছ থেকে জানাগেছে এখনো তারা সনাতন পদ্ধতিতে মধু আহরণ করছেন। মৌচাক থেকে মৌমাছি তাড়াতে খড়-কুটো বা বনের লতা-পাতা দিয়ে মশাল তৈরী করেন। মৌচাক কাঁটার সময় মশাল জ্বালিয়ে ধোয়া তৈরী করে মৌচাকে ধোয়া দিয়ে মৌমাছি তাড়ানো হয়। এসময় মৌয়ালরা মাথায় টুপি, হাতে ও মুখে কাপড় পেচিয়ে মৌচাক কাঁটেন। তাড়াহুড়োর কারণে অনেক মৌচাক আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন। এতে অনেক মৌমাছি মারা যায়। এছাড়া না বুঝে পুরো চাক কেঁটে ফেলেন। এতে মৌমাছির বাচ্চা ও ডিম নষ্ট হয়ে যায়। এসব কারণে আগের তুলনায় মৌচাক কমে গেছে। মৌয়ালরা জানান, আগুন না জ্বালিয়ে মেশিনের সাহায্যে ধোয়া দিয়ে মৌচাক কাঁটা যায়। কিন্তু মেশিন ও মুখের মাক্সের দাম বেশি হওয়ার কারণে তারা মেশিন কিনতে পারে না। তাছাড়া মহাজনের অধিনে যে সব মৌয়ালরা মধু আহরণ করতে যায় তাদেরকেও মেশিন বা মাক্স না দেয়ায় সনাতন পদ্ধতিতে মধু আহরণ করতে হচ্ছে। এছাড়া অসর্তকতার কারণে মশালের আগুন পড়ে বা মশাল বনের মধ্যে ফেলে দেওয়ায় ইতিপূর্বে একাধিক বার বনে আগুন লাগার ঘটনা ঘোটেছে।
এ ব্যাপারে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ বশির উল আল-মামুন জানান, মৌয়ালরা মধু আহরণের সময় মৌমাছি না পোড়ায়, পুরোচাক না কেঁটে ফেলেন এবং ব্যবহৃত মশাল যেন বনের মধ্যে ফেলে না দেয় সেজন্য মৌয়ালদের পরামর্শ ও পাশাপাশি তদারকি জোরদার করা হয়েছে। তাছাড়া বাঘের হামলা এড়াতে সতর্ক ও দলবদ্ধ ভাবে মৌয়ালদের চলাফেরা করা পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া চলতি মধু আহরণ মৌসুমে মৌয়ালদের নির্বিঘেœ মধু আহরণে বনদস্যুদের তৎপরতা রোধে টহল জোরদার করা হয়েছে।